মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বাণিজ্য নিয়ে এমন কিছু কথা বলেন যা তথ্যের সঙ্গে মেলে না। সম্প্রতি, তিনি ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও ভুল তথ্য দিয়েছেন।
খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে এবং ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো কিছুই কেনে না।
আসুন, দেখে নেওয়া যাক, ট্রাম্পের এই দাবিগুলোর সত্যতা কতটুকু।
রবিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বাণিজ্য এবং শুল্ক নিয়ে বেশ কিছু মিথ্যা কথা বলেন। তিনি আবারও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিকে বিশাল আকারে দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার থেকে রপ্তানি অনেক কম।
ফলে বাণিজ্য ঘাটতি তো আছে, তবে ট্রাম্পের দাবির মতো এত বিশাল নয়। সরকারি হিসাব বলছে, ২০২৪ সালে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৬৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৯.০৫ লক্ষ কোটি টাকা)।
শুধু পণ্য বাণিজ্যের হিসাব ধরলে এই ঘাটতি ছিল ২৯৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩২.৫২ লক্ষ কোটি টাকা)।
ট্রাম্পের আরেকটি ভুল ধারণা হলো, চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত শুল্কের অর্থ পরিশোধ করে। বাস্তবে, এই শুল্ক পরিশোধ করে মার্কিন আমদানিকারকরা।
অর্থাৎ, চীনের রপ্তানিকারকরা নয়, বরং আমেরিকান ব্যবসায়ীরাই এই খরচ বহন করে।
ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়েও ট্রাম্প বেশ কিছু ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো পণ্য কেনে না।
কিন্তু তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭১.৪২ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে।
ট্রাম্পের এমন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রায়ই বলেন যে ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য কেনে না। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে কিছু বাণিজ্য বাধা রয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে যে, ২০২৪ সালে ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২.৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১.৪১ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের কৃষি পণ্য আমদানি করেছে।
অবশ্য, ট্রাম্পের এই ধরনের ভুল তথ্য দেওয়া নতুন কিছু নয়। বাণিজ্য নিয়ে সঠিক তথ্য জানা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনেক দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন