অষ্ট্রিয়ার একটি চার্চেরCrypt-এ (কবরখানা) পাওয়া যাওয়া এক মমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা রহস্যের সমাধান করেছেন গবেষকরা।
জানা গেছে, এই মমির শরীর সংরক্ষণে এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল – যা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং কিছুটা অস্বাভাবিকও বটে।
গবেষকদের মতে, এই মমিটিকে সংরক্ষণের জন্য মলদ্বার (Rectum) ব্যবহার করা হয়েছিল।
সেন্ট থমাস অ্যাম ব্লাসেনস্টাইন চার্চের Crypt-এ সংরক্ষিত এই মমিটি নিয়ে কৌতূহল ছিল অনেক দিনের।
শোনা যায়, এটি ছিল এক সম্ভ্রান্ত পাদরি, ফ্রাঞ্জ জাভার সিডলার ভন রোজেনেগ-এর দেহ, যিনি ১৭৪৬ সালে ৩৭ বছর বয়সে মারা যান।
প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁর এই দেহ ‘বায়ু-শুকনো পুরোহিত’ নামে পরিচিত ছিল।
নতুন গবেষণায় জানা গেছে, এই মমিটিকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁর পেটের অংশে এবং শ্রোণী অঞ্চলে কাঠের টুকরা, কাপড়ের টুকরা (যেমন শন ও রেশম) এবং জিঙ্ক ক্লোরাইড দিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল।
এই উপাদানগুলো শরীরের ভেতরের তরল শুষে নিতে সাহায্য করেছে।
জার্মানির লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটির প্যাথলজিস্ট এবং গবেষণাটির প্রধান লেখক ড. আন্ড্রেয়াস নারলিখ জানান, এই আবিষ্কারটি ছিল সত্যিই অপ্রত্যাশিত, কারণ এমন প্রক্রিয়ার কোনো বাহ্যিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, “দেহের দেয়াল খোলা হয়নি – তাই সম্ভবত মলদ্বারই ছিল ভেতরের প্রবেশপথ।”
প্রাচীন মিশরের মমির সংরক্ষণের পদ্ধতির থেকে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, এর আগে বিশেষজ্ঞরা মমিটির বাহ্যিক পরীক্ষা এবং এক্স-রে করেছিলেন।
এক্স-রে-তে এর অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলো ধরা না পড়লেও, বাম পাশের নিচের অন্ত্রে গোলাকার একটি বস্তু দেখা গিয়েছিল।
এর ফলে শোনা গিয়েছিল, হয়তো এই ব্যক্তি কোনো বিষাক্ত ক্যাপসুল খেয়ে মারা গিয়েছিলেন।
সম্প্রতি, Crypt-এর সংস্কারের সময় নারলিখ এবং তাঁর সহকর্মীরা আংশিক ময়নাতদন্ত, সিটি স্ক্যান এবং অন্যান্য বিশ্লেষণের অনুমতি পান।
তাঁদের অনুসন্ধানে জানা যায়, মমিটি একজন পুরুষের, বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ছিল।
চামড়ার নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তিনি ১৭৩৪ থেকে ১৭৮০ সালের মধ্যে মারা যান।
তাঁর মুখ, পায়ের পাতা এবং পায়ের নিচের অংশে পচন ধরেছিল।
গবেষক দল আরও জানায়, সিডলারের জীবনযাত্রার সঙ্গে এই তথ্যগুলো মিলে যায়।
তাঁর হাড়, দাঁত ও ত্বকের বিশ্লেষণের পর জানা যায়, তাঁর খাদ্যতালিকা স্থানীয় একজন পাদরির মতোই ছিল, যেখানে প্রচুর পরিমাণে পশুর মাংস এবং মধ্য ইউরোপীয় শস্য ছিল।
আরামদায়ক জীবন কাটানো এই পুরোহিতের কঙ্কালে কোনো মানসিক চাপের চিহ্ন ছিল না।
তাঁর দেহে দীর্ঘকাল পাইপ (Pipe) ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেইসাথে ছিল বুড়ো আঙুলে ফোস্কার মতো সমস্যা।
ড. নারলিখ বলেন, “সেই সময়ে পুরোহিতদের জন্য একদিকে যেমন পায়ের জুতো পরা এবং পাইপ ব্যবহার করা খুবই স্বাভাবিক ছিল।”
শরীরের ভেতরে পাওয়া ‘বিষাক্ত ক্যাপসুল’-এর রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে গবেষকরা জানতে পারেন, এটি ছিল একটি কাঁচের পুঁতি, যা সম্ভবত প্রার্থনা করার মালা তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
সম্ভবত কাপড়ের সঙ্গে এটিও ভরে দেওয়া হয়েছিল।
গবেষক দল আরও জানায়, সিডলারের মৃত্যুর কারণ সম্ভবত ফুসফুসে রক্তক্ষরণ, যা যক্ষ্মা রোগের ফল।
তাঁর শরীরে এই রোগের লক্ষণ পাওয়া গিয়েছিল।
তবে কেন সিডলারকে এভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত ‘মাইয়াজমা’ (দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস) থেকে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে বা তাঁকে তাঁর হোম মঠ ওয়াল্ডহাউসেনে (Waldhausen) স্থানান্তরিত করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল।
ড. নারলিখ বলেন, “এই ধরনের সংরক্ষণের এটিই প্রথম নথিভুক্ত ঘটনা।
তাই, আমরা জানি না, ঠিক কতবার বা কোথায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে আমরা ধারণা করি, এই ‘স্বল্পমেয়াদী সংরক্ষণ’ সম্ভবত আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশিবার ব্যবহৃত হয়েছিল।”
তথ্য সূত্র: The Guardian