সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশেপাশে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। শুক্রবার ভোরে চালানো এই হামলায় সিরিয়ার সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার হুঁশিয়ারি জানানো হয়। খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।

সম্প্রতি সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের প্রতি একটি কড়া বার্তা দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির নতুন সরকার মূলত ইসলামপন্থী সংগঠন ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’-এর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমত আল-হিজরি সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘অন্যায় ও গণহত্যা চালানোর’ অভিযোগ তোলেন। শুক্রবার ভোরে দ্রুজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সিরিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে রাজি নয়। একইসঙ্গে, তারা সুয়েদা প্রদেশের প্রশাসনিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের এবং সুয়েদা-দামেস্ক মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।

দামাক্সের জারমানা শহরে, যেখানে সম্প্রতি সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে স্থানীয় দ্রুজ যোদ্ধা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরে, সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাহিনী জারমানার আশেপাশে অবস্থান নেবে, তবে ভেতরে প্রবেশ করবে না।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এলাকার কাছে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে, তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটস এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, “সিরীয় সরকারের প্রতি আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা দামেস্কের দক্ষিণে কোনো বাহিনীর সমাবেশ অথবা দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি কোনো হুমকি বরদাস্ত করব না।”

এদিকে, সিরিয়ার সরকারি মিডিয়া জানিয়েছে, এই হামলায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছে পাহাড়ের উপরে অবস্থিত পিপলস প্যালেসের আশেপাশে আঘাত হেনেছে।

গত দু’দিনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আহত সিরীয় দ্রুজদের সরিয়ে নিয়েছে।

অন্যদিকে, গোলান মালভূমিতে একটি দুর্ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক সদস্য নিহত এবং তিনজন সামান্য আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।

একটি বিতর্কিত অডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সোমবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি অডিও ক্লিপে এক ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সমালোচনা করতে শোনা যায়। ক্লিপটি এক দ্রুজ ধর্মগুরুর বলে অভিযোগ উঠলেও, মারওয়ান কিওয়ান নামের ওই ধর্মগুরু জানান, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। এই ঘটনায় অনেক সুন্নি মুসলিম ক্ষুব্ধ হন।

সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুটি পৃথক হামলায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, সাহনায়া এবং দ্রুজ-অধ্যুষিত দামেস্কের জারমানা শহরে সংঘর্ষে ৫৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে স্থানীয় যোদ্ধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছে।

দ্রুজ একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা একাদশ শতকে শিয়া ইসলামের একটি শাখা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ দ্রুজের অর্ধেকের বেশি সিরিয়ায় বাস করে, বিশেষ করে সুয়েদা প্রদেশে এবং দামেস্কের কিছু উপশহরে। এছাড়া, লেবানন ও ইসরায়েলেও তাদের বসবাস রয়েছে। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে এবং ১৯৮১ সালে এটি নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস