ইন্দোনেশিয়ার রুপির দর পতন, বাংলাদেশের জন্য কি কোনো সতর্কবার্তা?
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিতে এখন এক গভীর সংকট। দেশটির মুদ্রা রুপির (Rupiah) দর ক্রমাগতভাবে কমছে, যা ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
রুপির এই দর পতনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির দুর্বল অবস্থান এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ কিছু নীতিকে।
ইন্দোনেশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রুপির দর প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। দেশটির অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকারের কিছু নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্টের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক একটি কর্মসূচি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করার পরিকল্পনার কারণে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত।
এছাড়াও, বিদেশি কোম্পানিগুলোর উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনাও তাদের উদ্বেগের কারণ।
রুপির এই দর পতন শুধু একটি মুদ্রার সংকট নয়, বরং এটি একটি গভীর অর্থনৈতিক উদ্বেগের চিত্র। ১৯৯৮ সালের সংকটে রুপির দর পতনের ফলে প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর শাসনের অবসান হয়েছিল।
সেই ঘটনার স্মৃতি আজও ইন্দোনেশিয়ার মানুষের মনে গেঁথে আছে। তাই, রুপির এই দুর্বল অবস্থা তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুপির দর পতনের পেছনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য ঘাটতি এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা প্রধান ভূমিকা রাখে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পণ্য আমদানির উপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। একইসঙ্গে, চীনের অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবও ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ইন্দোনেশিয়ার এই সংকটকালে দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার মানও কমতে শুরু করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কোভিড-১৯ এর প্রভাব এর অন্যতম কারণ।
ইন্দোনেশিয়ার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও রুপির দর পতনের মতো ঘটনাগুলোর প্রভাব থাকতে পারে।
তাই, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, বাণিজ্য নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা