বাংলার আকাশে-বাতাসে আজও মিশে আছে এক সন্ন্যাসীর প্রার্থনা, এক অবিরাম ভালোবাসার গল্প। গ্রিসের এজিয়ান সাগরের বুকে অবস্থিত অ্যামোরগোস দ্বীপে, পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন মঠ, যার নাম পানাগিয়া হজোভিওটিসা।
এই মঠের জীবন এবং এখানকার মানুষের হৃদয়ে মিশে আছেন ফাদার স্পাইরিডন। গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই দ্বীপে, এই মঠে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ফাদার স্পাইরিডন একজন গ্রিক অর্থোডক্স সন্ন্যাসী। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে প্রার্থনা, শ্রম এবং দ্বীপের মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে।
দ্বীপের মানুষের কাছে তিনি শুধু একজন সন্ন্যাসী নন, বরং এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন তিনি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে দ্বীপ ছেড়ে গিয়েছিলেন, তখন দ্বীপের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নাস্তিক পর্যন্ত সবাই তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন।
তাদের কাছে ফাদার স্পাইরিডন ছিলেন দ্বীপের আত্মার মতো, যাঁর উপস্থিতি তাঁদের জীবনে এনে দেয় এক বিশেষ শান্তি।
নবম শতকে নির্মিত এই মঠটি যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। কিংবদন্তি আছে, বাইজেন্টাইন সন্ন্যাসীরা তুরস্ক থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসেছিলেন এবং একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পাহাড় থেকে পাথর খসে পড়ার সময় তাঁরা একটি হাতুড়ি খুঁজে পান। একে ঐশ্বরিক ইঙ্গিত মনে করে তাঁরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচুতে এই মঠটি নির্মাণ করেন।
আজও সেই মঠের ছোট উপাসনালয়ে কুমারী মেরির একটি পবিত্রIcon ও হাতুড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আছে।
ফাদার স্পাইরিডন ১৯ বছর বয়সে, ১৯৭১ সালে মঠে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ও তাঁর সহযোগী কনস্টান্টিন পাপাকনস্টান্টিনউ এই মঠের প্রধান।
কনস্টান্টিন একসময় ফ্যাশন জগতে কাজ করতেন। তিনি বিভিন্ন ভাষায় মঠের ইতিহাস বর্ণনা করেন।
পর্যটকদের কাছে এই মঠ শুধু একটি দর্শনীয় স্থান নয়, বরং আধ্যাত্মিক শান্তির এক আশ্রয়স্থল। যারা এখানে আসেন, ফাদার স্পাইরিডন তাদের হাসিমুখে স্বাগত জানান।
তাদের ক্লান্তি দূর করতে দেন ঠান্ডা জল, মিষ্টি ও নিজের হাতে তৈরি মধু দিয়ে বানানো “রাকি” নামক এক প্রকারের পানীয়।
ফাদার স্পাইরিডন বলেন, “ভার্জিন মেরি সকলের আত্মায় আরোগ্য দান করেন। এই মঠ সকলের জন্য খোলা।”
অ্যামোরগোসের মানুষের কাছে তিনি শুধু একজন ধর্মগুরু নন, একজন বন্ধু এবং পথপ্রদর্শকও বটে। দ্বীপের মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে থাকেন।
এমনকি, দ্বীপের মানুষের নাম-দিবসে তিনি তাদের শুভেচ্ছা জানান।
ফাদার স্পাইরিডন-এর জীবন ভোর ৩টায় শুরু হয়, যখন তিনি প্রথম প্রার্থনার জন্য ওঠেন। তাঁর এই কঠোর জীবনযাত্রা এবং দ্বীপের মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে।
তিনি সবসময় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলেন। তাঁর মতে, প্রকৃতি মানুষের জন্য, তাই এর যত্ন নেওয়া উচিত।
ফাদার স্পাইরিডন-এর কথায়, তাঁর জীবন যেন এই মঠের সঙ্গেই বাঁধা। তিনি চান, এই মঠ এবং এর চারপাশের পরিবেশ সবসময় শান্ত ও পবিত্র থাকুক।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস