ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বার্বন হুইস্কির ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাতিল করেছে।
মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল। তবে, বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইইউ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধ সবসময়ই অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এই ধরনের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের তীব্র আপত্তি। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের মদের ব্যবসার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে তাদের দেশের অ্যালকোহল শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
শুরুতে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তালিকায় বার্বন হুইস্কি এবং ওয়াইন-এর নামও ছিল।
কিন্তু পরে তালিকা থেকে এগুলো বাদ দেওয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থার আপত্তির কারণে এই পরিবর্তন আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির কারণেও অনেক দেশ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আশঙ্কা ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা পদক্ষেপ তাদের ওয়াইন শিল্পের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ থেকে আসা ওয়াইনের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাইমন হ্যারিস বার্বন হুইস্কির ওপর শুল্ক আরোপের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে অ্যালকোহল শিল্পের ক্ষতির বিষয়টিও বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আগেও, বাণিজ্য যুদ্ধে অ্যালকোহল জাতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। যখন ট্রাম্প প্রথম দফায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেন, তখন ইইউ প্রতিশোধ হিসেবে হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেল, ব্লু জিন্স এবং বার্বন হুইস্কির মতো যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে মদ-জাতীয় পণ্যের শুল্ক প্রায় সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়ার ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ৪৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
২০১৮ সালে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬.৭ বিলিয়ন ইউরো।
আয়ারল্যান্ড মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের হুইস্কি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের উৎপাদিত হুইস্কি রপ্তানি করে। শুধু তাই নয়, উত্তর আয়ারল্যান্ডের হুইস্কি উৎপাদনকারীরাও ইইউ-এর বাণিজ্য শুল্কের কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
কারণ, তারা মূলত আয়ারল্যান্ডের উৎপাদিত বার্লি ব্যবহার করে।
ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, তারা এমন পদক্ষেপ নিতে চায় যা ইইউ-এর জন্য সর্বনিম্ন ক্ষতির কারণ হবে, কিন্তু দর কষাকষির ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা বাড়াবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান