ছোট্ট শিশুদের অনলাইনে প্রভাব বিস্তারের জগৎ: একটি উদ্বেগের চিত্র।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মাধ্যমগুলোতে একদিকে যেমন রয়েছে তথ্য আদান-প্রদানের অবাধ সুযোগ, তেমনি বাড়ছে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি তথ্যচিত্র, যার বিষয়বস্তু শিশুদের অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি এবং এর সম্ভাব্য বিপদগুলো, সেই উদ্বেগকে আরও একবার সামনে এনেছে।
ডকুমেন্টারিটির মূল বিষয় হলো, “কিডইনফ্লুয়েন্সিং”-এর অন্ধকার দিক। এখানে একজন শিশু, পাইপার রকেল এবং তার মা টিফানি স্মিথের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
পাইপার ইউটিউবে পরিচিতি পাওয়ার পর, তার মা ব্যবসার প্রসারের জন্য আরও কিছু শিশুকে তাদের দলে ভেড়ান। “দ্য স্কোয়াড” নামে পরিচিত এই শিশুরা, অল্প বয়সেই খ্যাতি ও অর্থের লোভে পরে।
তবে, এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে ছিল অনেক গভীর ক্ষত। একসময়, “দ্য স্কোয়াড”-এর ১১ জন সদস্য টিফানি স্মিথ এবং তার সহযোগী হান্টার হিলের বিরুদ্ধে শিশুশ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
তাদের অভিযোগ ছিল, শিশুদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হতো এবং তাদের ওপর যৌনতামূলক মন্তব্যও করা হতো। মামলার শুনানিতে, টিফানির বিরুদ্ধে শিশুদের অন্তর্বাস বিষয়ক একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগও উঠে আসে।
যদিও পরবর্তীতে, কোনো দায় স্বীকার না করেই মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়।
তথ্যচিত্রে, প্রাক্তন “স্কোয়াড” সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাদের বয়ানে উঠে এসেছে, কিভাবে তারা অল্প বয়সেই ক্যামেরার সামনে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
এছাড়াও, শিশুদের পরিবার এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যও রয়েছে, যা এই ব্যবসার ভেতরের জটিলতাগুলো উন্মোচন করে। যেখানে একদিকে ছিল অর্থ উপার্জনের হাতছানি, অন্যদিকে ছিল শিশুদের প্রতি চরম অবহেলা।
এই তথ্যচিত্রটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিশুদের অনলাইন জগতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা কতটা জরুরি। ইউটিউব বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের কন্টেন্ট তৈরি এবং তা থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
তবে, এর ফলে শিশুদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের অনলাইন ক্রিয়াকলাপের ওপর নজরদারি করা এবং তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।
“কিডইনফ্লুয়েন্সিং”-এর এই অন্ধকার দিক, আমাদের সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শিশুদের সুরক্ষায়, আমাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান