**বিশ্বের সুরে একতার গান: ভ্যালেন্তিনা গনচারোভার সুরের অভিযাত্রা**
ইউক্রেনের কিয়েভে জন্ম নেওয়া ভায়োলিনিস্ট ও ইলেক্ট্রনিক শিল্পী ভ্যালেন্তিনা গনচারোভার সুরের জাদু এখন বিশ্বজুড়ে। তাঁর সঙ্গীতের গভীরতা, জীবনের প্রতিচ্ছবি এবং শান্তির বার্তা আজ মানুষকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ক্যাম্পানেল্লি’ যেন তারই প্রমাণ।
গনচারোভার সঙ্গীত জীবন শুরু হয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়ায়, যেখানে তিনি ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে তিনি লেনিগ্রাড কনজারভেটরিতে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) শিক্ষা গ্রহণ করেন।
অল্প বয়সেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ছোট হাতের কারণে তাঁকে ভায়োলিন বাজানোর জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।
১৯৫০-এর দশকে কিয়েভে জন্ম নেওয়া গনচারোভার জীবনে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় ফ্রি জ্যাজ ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাব। এই সময়ে তিনি মঙ্গোলিয়ার একটি বৌদ্ধ মঠে যান, যা তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়।
গনচারোভার মতে, সঙ্গীত কেবল সুরের খেলা নয়, এটি মানুষের জীবনের গভীর অনুভূতি এবং উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ।
গনচারোভার সঙ্গীতের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তাঁর স্বামী ইগর যুবকভের সঙ্গে তাঁর সহযোগিতা। ইগর একজন প্রকৌশলী, যিনি তাঁর সঙ্গীতের ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেন।
তাঁরা দুজনে মিলে সাধারণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে শব্দের নতুন জগৎ তৈরি করেন, যা গনচারোভার সুরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তাঁদের এই সৃজনশীলতা তাঁদের কাজকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
২০২২ সালে গনচারোভার ‘ওশান’ অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়, যা তাঁর সঙ্গীত জীবনের এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
‘ওশান’ ছিল একটি বিশাল সৃষ্টি, যেখানে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এর পরে তিনি কিছুদিনের জন্য নতুন করে গান লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরে, তিনি আবার নতুন করে কাজ শুরু করেন।
সেই সময় তিনি অনুভব করেন, পৃথিবীতে যেন কিছু একটা খারাপ ঘটছে। এই অনুভূতি থেকেই জন্ম নেয় তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ক্যাম্পানেল্লি’।
‘ক্যাম্পানেল্লি’ ইতালীয় শব্দ, যার অর্থ ঘণ্টা বা ঘণ্টাধ্বনি। এই অ্যালবামের গানগুলোতে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের যাত্রাপথকে তুলে ধরা হয়েছে।
গনচারোভার মতে, মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে, তখন উচ্চতর জগৎ ও এই পৃথিবীর মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপিত হয়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোতে ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সংজ্ঞায়িত করে।
গনচারোভা একজন শান্তিবাদী শিল্পী। তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে তাঁর সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
তাঁর সঙ্গীত জীবনের গভীরতা এবং তাঁর শান্তির বার্তা বর্তমান বিশ্বে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, সঙ্গীত মানুষের আত্মার খোরাক, যা মানুষকে একতা ও ভালোবাসার পথে নিয়ে যায়। তাঁর সুরের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দিতে চান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান