শিরোনাম: স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর জীবনযাত্রার মান: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষা আছে?
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলো, যেমন ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড, তাদের উচ্চ জীবনযাত্রার মান এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধার জন্য সুপরিচিত। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন সূচকে, এই দেশগুলো শীর্ষ স্থানগুলো অধিকার করেছে, যা তাদের শক্তিশালী সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা এবং নাগরিকদের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ।
উন্নত জীবনযাত্রার সূচকে শীর্ষ স্থান অর্জনের পেছনে রয়েছে তাদের সুসংহত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগ।
গ্লোবাল সিটিজেন সলিউশনস (GCS) নামক একটি সংস্থার পাসপোর্ট সূচকে সুইডেন প্রথম স্থান অধিকার করেছে, যেখানে ডেনমার্ক অষ্টম এবং নরওয়ে দশম স্থানে রয়েছে। শুধু পাসপোর্ট সূচকেই নয়, জীবনযাত্রার মানের দিক থেকেও এই দেশগুলো উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে।
জীবনযাত্রার মান বিচারে সুইডেন প্রথম, ডেনমার্ক চতুর্থ এবং নরওয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে। এমনকি ফিনল্যান্ডও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই, তারা এই সূচকে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতে নাগরিকদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রার মূল কারণ হলো তাদের শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই দেশগুলো স্বাস্থ্যখাতে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচুর বিনিয়োগ করে।
এখানে সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, পরিবার-বান্ধব নীতি, যেমন দীর্ঘকালীন প্যারেন্টাল লিভ প্রোগ্রাম, কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সুইডেনে এই ছুটি বাবা-মা উভয়ের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
এই দেশগুলোতে উচ্চ করের হার প্রচলিত আছে, যা তাদের উন্নত পরিষেবাগুলোর জন্য অর্থ সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, সুইডেনে করের হার ২৯ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে, এই করের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন খাতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়, যা নাগরিকদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা দেয়।
স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও এই দেশগুলো বেশ অগ্রগামী। ডেনমার্ক ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৭০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সুইডেন ২০45 সালের মধ্যে এবং নরওয়ে ২০50 সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের পরিকল্পনা করছে। এই দেশগুলোতে প্রচুর বনভূমি বিদ্যমান, যা তাদের পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এমনকি শহরগুলোতেও সবুজ স্থানের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়, যেমন স্টকহোম এবং অসলো গ্রিন সিটি ইনডেক্সে শীর্ষ দশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
এছাড়াও, স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতে বসবাসকারী এবং সেখানে বৈধভাবে বসবাস করার অনুমতিপ্রাপ্ত যে কেউ এই সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারে। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ১২৮টি দেশে ভ্রমণ করতে পারে, ডেনমার্কের নাগরিকরা ১২৭টি দেশে এবং নরওয়ের নাগরিকরা ১২৪টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়গুলোতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
উন্নত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সুষম কর কাঠামো তৈরি করে একটি উন্নত জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদন।