শিরোনাম: বিশ্ব সঙ্গীতের ইতিহাসে প্রতারণা: নকল শিল্পী থেকে এআই-এর জাল গানের দৌরাত্ম্য
সঙ্গীতের জগৎ সবসময়ই বর্ণিল, খ্যাতি আর সাফল্যের হাতছানিতে ভরা। কিন্তু এই ঝলমলে দুনিয়ার অন্দরে লুকিয়ে থাকে কিছু অন্ধকার দিক, যেখানে প্রতারণা আর ভণ্ডামির শিকার হন শিল্পী থেকে শুরু করে শ্রোতারাও।
সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে সঙ্গীত জগতে ঘটে যাওয়া কিছু চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে, যা আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে সঙ্গীতের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে।
শুরুতেই আসা যাক, জার্মান সঙ্গীত শিল্পী উলফগ্যাং ফ্লুর-এর কথা।
তিনি একসময় জনপ্রিয় ব্যান্ড ক্র্যাফটওয়ার্কের সদস্য ছিলেন। তাঁর সাথে একটি নকল কথোপকথনে জড়িয়ে পড়েন ‘ড্যাফ্ট পাঙ্ক’-এর থমাস ব্যাঙ্গার্টার সেজে আসা এক ব্যক্তি।
ফ্লুরকে রাজি করানো হয়, তিনি যেন ‘থমাস ভাংগার্ড’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে একটি গানের জন্য কণ্ঠ দেন, যা পরে প্রকাশিত হয়। যদিও পরে জানা যায়, ব্যাঙ্গার্টার এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এই ধরনের প্রতারণা নতুন নয়।
নব্বইয়ের দশকে ‘মিলি ভ্যানিলি’ নামের একটি জার্মান আর-অ্যান্ড-বি জুটির কথা মনে করুন।
তাদের গানগুলি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তারা সেরা নতুন শিল্পী হিসেবে গ্র্যামি পুরস্কারও জিতে নেয়।
কিন্তু তাঁদের লাইভ অনুষ্ঠানে ধরা পড়ে যায় আসল ঘটনা।
তাঁদের গানগুলো আসলে তারা নিজেরাই গাইতেন না, বরং অন্য শিল্পীরা তাদের হয়ে গান গাইতেন, আর তারা কেবল ঠোঁট মেলাতেন।
ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতও প্রতারণা থেকে মুক্ত নয়।
এখানেও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যা শ্রোতাদের হতবাক করেছে।
হেইনরিখ-গুস্তাভ কাসাদেউস নামের এক শিল্পী ও তাঁর ভাইদের তৈরি করা কিছু কাজকে বাখ পরিবারের হারিয়ে যাওয়া সৃষ্টি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আবার, পিয়ানোবাদক জয়েস হাটোর স্বামী তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে অন্য শিল্পীদের রেকর্ড করা গানগুলি তাঁর স্ত্রীর নামে চালিয়ে দেন।
সম্প্রতি, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার ধরনও পাল্টেছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর মাধ্যমে গান তৈরি করে তা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপলোড করার ঘটনা বাড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, উত্তর ক্যারোলিনার এক ব্যক্তি এআই ব্যবহার করে ‘জাইগোটিক ওয়াশস্ট্যান্ডস’ (Zygotic Washstands) এর মতো উদ্ভট শিরোনামের গান তৈরি করে, যা তিনি বিভিন্ন বট (bot) ব্যবহার করে শোনাতেন, এবং এর মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন।
এই ঘটনাগুলো সঙ্গীতের জগতে প্রতারণার এক ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে।
একদিকে, খ্যাতি অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা—এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে বাড়ছে প্রতারণার ঝুঁকি।
শ্রোতাদের সচেতন হতে হবে, এবং শিল্পীদেরও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
কারণ, সঙ্গীতের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে শিল্পীর কণ্ঠ, সুর, এবং অনুভূতির গভীরতায়, যা নকল বা প্রযুক্তিনির্ভরতার মাধ্যমে তৈরি করা যায় না।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান