মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দী বিনিময়ের ফলস্বরূপ রাশিয়ার কারাগারে আটক থাকা দ্বৈত নাগরিকত্বধারী একজন নারীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) এই বিনিময় হয়, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
কেসেনিয়া কারেলিনা নামের ওই নারীকে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েকাতেরিনবার্গ শহরে আটক করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য একটি সংস্থায় সামান্য কিছু অর্থ দান করেছিলেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করেছে আর্থার পেট্রভ নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে আটক ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে সংবেদনশীল মাইক্রোইলেকট্রনিকস পাচারের অভিযোগ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, কারেলিনা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
কারেলিনার মুক্তির ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে রাশিয়ায় আটক হওয়া আমেরিকানদের মুক্তি দেওয়ার ঘটনা এটি।
জানা গেছে, কারেলিনা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন সাবেক ব্যালে নৃত্যশিল্পী।
পরিবারকে দেখতে রাশিয়ায় ফিরে আসার পরেই তাকে আটক করা হয়। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) জানায়, কারেলিনা ইউক্রেনের একটি সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন, যারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
তবে মানবাধিকার সংস্থা ‘দ্য ফার্স্ট ডিপার্টমেন্ট’ জানিয়েছে, কারেলিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কারণ ছিল ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য তার ৫২ ডলার অনুদান।
কারেলিনার বাগদত্তা জানিয়েছেন, তিনি তার ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কারেলিনার আইনজীবী জানিয়েছেন, বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছেন।
এফএসবি এক বিবৃতিতে জানায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কারেলিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেট্রভের সঙ্গে তার বিনিময় হয়।
এছাড়া, কারেলিনাকে একটি বিমানে করে কোথাও নিয়ে যাওয়ার এবং আবুধাবি বিমানবন্দরে বন্দী বিনিময়ের দৃশ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, পেট্রভ রাশিয়ার অস্ত্র শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক উপাদান সরবরাহকারীদের হয়ে কাজ করতেন।
এর আগে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে কুখ্যাত রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্টর বুটের সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের মধ্যস্থতা করেছে।
আর দুবাই শহরটি অনেক রুশ ও ইউক্রেনীয় নাগরিকের আশ্রয়স্থল হয়েছে, যারা ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর সেখানে পালিয়ে এসেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস