ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির নাটকীয় পরিবর্তন: বিশ্ব বাণিজ্য ও বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কয়েক দিন ধরে শুল্ক আরোপের পক্ষে জোরালো অবস্থান জানানোর পর, তিনি হঠাৎ করেই তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে, এর প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প বেশ কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি তার এই পরিকল্পনা স্থগিত করেন। শুরুতে, শুল্ক আরোপের বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল।
এমনকি, ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প শুল্ক স্থগিতের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, অনেক দেশ তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে এবং তাদের ন্যায্য শুল্ক দিতে হবে।
কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরেই, ৯ এপ্রিল ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ৯০ দিনের জন্য বেশ কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক স্থগিত করা হচ্ছে এবং এই সময়ে পারস্পরিক শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
তবে, চীনকে এই সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়েছে এবং তাদের শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শুল্ক হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা কর, যা ব্যবসার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ে।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, শুল্কের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়িয়ে অন্যান্য ফেডারেল ট্যাক্স কমানো সম্ভব হবে। যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উচ্চ শুল্কের মাধ্যমে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কর কমানো কঠিন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ৯ এপ্রিল ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচকে প্রায় ৯.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেলেও, ফেব্রুয়ারী মাসের তুলনায় সূচকটি এখনো প্রায় ১১ শতাংশ নিচে ছিল।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে জানা যায়, অনেক দেশ তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, মানুষজন একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। তারা একটু ভীত ছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আর্থিক বাজারে পরিবর্তন আসে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, একদিনের মধ্যে কত পরিবর্তন হলো।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শুল্কের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তা বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই পরিবর্তনের ফলে বাণিজ্য চুক্তি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোতে কেমন প্রভাব পড়ে, সেদিকে এখন সবার নজর।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা