পানামার রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন উত্তেজনার পারদ বেশ ঊর্ধ্বমুখী। দেশটির বিরোধী দল সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ছদ্মবেশী আগ্রাসনের’ অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, কূটনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন কার্যত পানামার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানছে।
সম্প্রতি, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের তিন দিনের পানামা সফর শেষে দেশটির সাবেক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা আসে। এরপরই এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিরোধীদের মতে, এটি এক ধরনের ‘ছদ্মবেশী আগ্রাসন’, যেখানে কোনো গোলাগুলি ছাড়াই শুধু হুমকি ও ক্ষমতার দাপট দেখানো হচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে, পানামা খাল এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার মধ্যে দীর্ঘ টানাপোড়েন রয়েছে। এক সময় এই খালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। কিন্তু ১৯৭৭ সালের টরিজো-কার্টার চুক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে পানামার হাতে এর মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে পানামা থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে পানামার বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ পানামার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। বিশেষ করে, দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। এই এমওইউ-তে সামরিক প্রশিক্ষণের স্থান এবং মার্কিন সম্পত্তি স্থাপনের মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
পানামার সরকার যদিও বলছে, এগুলো সামরিক ঘাঁটি নয় এবং চুক্তিটি সাময়িক, তবুও বিরোধী দলগুলো এটিকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, বিদেশি সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে কোনো স্থাপনা থাকা মানেই তা সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য।
শুধু তাই নয়, ১৯৮৯ সালের ‘অপারেশন জাস্ট কজ’-এর স্মৃতি এখনো অনেক পানামাবাসীর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ওই সময় মার্কিন সেনারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, যাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এই প্রত্যাবর্তন তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।
পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনোর বিরুদ্ধেও এই সংকট মোকাবিলায় স্বচ্ছতার অভাব এবং দুর্বল পদক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, খালের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা আদায়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, সরকার দেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে প্রেসিডেন্ট মুলিনোর জনপ্রিয়তা আরও হ্রাস পাবে। বর্তমানে, তার সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা বাড়ছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান