যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির একজন অভিবাসন বিচারক। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লুইজিয়ানার জেনা শহরে শুক্রবার অভিবাসন আদালতের বিচারক জামি ই. কোম্যান্স এই রায় দেন। তিনি জানান, খলিলের যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিতি “সম্ভাব্য গুরুতর পররাষ্ট্রনৈতিক পরিণতি” ডেকে আনতে পারে, যা বিতাড়নের জন্য যথেষ্ট। মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
আদালতে শুনানিতে বিচারক কোম্যান্স বলেন, সরকার “সুস্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য প্রমাণ” উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে যে খলিলকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত। এর প্রতিক্রিয়ায় খলিলের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট জানান, তাঁরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসন আপিল বোর্ডের কাছে আপিল করবেন। তিনি আরও বলেন, “সুতরাং, দ্রুত কিছু ঘটবে না।
খলিলের আইনজীবী শুনানির ন্যায্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “আজ আমরা আমাদের সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কাগুলো সত্যি হতে দেখলাম: মাহমুদকে একটি প্রহসনমূলক বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, যা তার ন্যায্য শুনানির অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য অভিবাসন আইনের অপব্যবহার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী খলিলকে গত ৮ই মার্চ ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টরা আটক করে। এরপর তাঁকে দ্রুত জেনার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যা তাঁর আইনজীবী এবং স্ত্রীর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। তাঁর স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং খুব শীঘ্রই তাঁর সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, খলিলের আইনজীবীরা তাঁর আটকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাঁদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সুরক্ষিত বাকস্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট মারকো রুবিও একটি বিরল আইনের আশ্রয় নিয়ে খলিলকে বিতাড়িত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই আইনে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য গুরুতর প্রতিকূল পররাষ্ট্রনৈতিক পরিণতি” ডেকে আনতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিতাড়িত করা যেতে পারে।
আদালতে শুনানিতে ভ্যান ডার হাউট জানান, সরকারের দাখিল করা নথি প্রমাণ করে যে তাঁর মক্কেলকে বিতাড়িত করার চেষ্টার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার আসলে তাঁর ক্লায়েন্টকে তাঁর মতপ্রকাশের কারণে বিতাড়িত করতে চাইছে।
মাহমুদ খলিল সিরিয়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা একজন ফিলিস্তিনি। তাঁর দাদা-দাদিকে তাঁদের আদিভূমি তিবেরিয়াস থেকে জোর করে বিতাড়িত করা হয়েছিল। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়নি।
তবে, সরকার বলছে, যারা এ ধরনের বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত। কারণ, প্রশাসন মনে করে, তাঁদের মতামত “ইহুদি বিদ্বেষী” এবং “হামাসপন্থী”। উল্লেখ্য, হামাস হলো একটি ফিলিস্তিনি সংগঠন, যারা ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এর জেরে গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস