ইউক্রেন যুদ্ধ: দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্র বিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ, উত্তেজনা তুঙ্গে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা হিসেবে সম্প্রতি যে অস্ত্র বিরতির প্রস্তাব এসেছিল, তা কার্যত ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে, যা শান্তি আলোচনার পথে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করেছে।
তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ নিয়ে তীব্র বাক্য বিনিময় করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষ দূত, স্টিভ উইটকফ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে ফিরে আসার পরেই এই ঘটনা ঘটে। মূলত, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ করার জন্য একটি সীমিত সময়ের অস্ত্র বিরতির বিষয়ে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে রাজি হয়েছিল।
কিন্তু চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে তাদের মধ্যে দ্রুত মতানৈক্য দেখা যায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, ইউক্রেন শুরু থেকেই তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং এর প্রমাণ হিসেবে গত তিন সপ্তাহে কিয়েভের চালানো বিভিন্ন হামলার একটি তালিকা তিনি যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে পেশ করবেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা কিয়েভের চুক্তি ভঙ্গের ৬০টির বেশি ঘটনার প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেয়ার করেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিগা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, রাশিয়া অস্ত্র বিরতি ঘোষণার পর থেকে ইউক্রেনের ওপর প্রায় ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র, ২,২০০টির বেশি ড্রোন এবং ৬,০০০টির বেশি গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করেছে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল বেসামরিক নাগরিকরা।
তিনি বলেন, “কে শান্তি চায় আর কে যুদ্ধ, তা বিশ্ববাসীর কাছে এখন পরিষ্কার।”
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেন সতর্ক করেছে যে রাশিয়া নতুন করে বসন্তকালীন অভিযান শুরু করতে পারে, যা তাদের আলোচনায় আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহত্তর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও, রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এর পেছনে বিভিন্ন শর্ত যুক্ত করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো পুতিনের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।
যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও মন্তব্য করেছেন। তিনি এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “যুদ্ধটি খুবই ভয়াবহ এবং অর্থহীন।”
এদিকে, কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ চলাচলের জন্য একটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই চুক্তির বাস্তবায়নে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তাদের জাহাজের বীমা, বন্দর সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেন তাদের পশ্চিমা মিত্রদের সরবরাহ করা একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হারানোর কথা জানিয়েছে। বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার সময় পাইলট পাভলো ইভানোভ নিহত হন।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত আগস্ট মাসে তারা প্রথম এফ-১৬ বিমানটি হারিয়েছিল।
অন্যদিকে, রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলে অন্তত দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস