গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্কের পুরনো ইতিহাস: বিতর্কিত তথ্যচিত্র আর প্রতিক্রিয়ার ঝড়।
ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের মধ্যেকার সম্পর্ক বহু বছরের পুরোনো। সম্প্রতি, গ্রিনল্যান্ডের একটি পুরনো ক্রায়োলাইট খনি নিয়ে তৈরি হওয়া একটি তথ্যচিত্র ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
“গ্রিনল্যান্ডের শ্বেত সোনা” (Grønlands hvide guld) নামের এই তথ্যচিত্রটি ডেনমার্কের অতীতের সেই শোষণকে সামনে এনেছে, যা গ্রিনল্যান্ডের মানুষের মনে গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ডেনমার্ক কয়েক দশক ধরে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি ক্রায়োলাইট খনি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছে। এই খনি থেকে ডেনমার্কের আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি ড্যানিশ ক্রোন (প্রায় ৪৬ বিলিয়ন পাউন্ড) আয়ের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে বিশাল একটি অঙ্ক।
এই তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর গ্রিনল্যান্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ডেনমার্কের প্রাক্তন উপনিবেশ হওয়ায় সেখানকার মানুষ তাদের অতীতের শোষণ এবং বঞ্চনার ইতিহাস নতুন করে উপলব্ধি করতে শুরু করে। অনেকেই মনে করেন, তথ্যচিত্রটি তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে আরও একবার উস্কে দিয়েছে।
তবে ডেনমার্কে এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শুরুতে কিছু ইতিবাচক আলোচনা হলেও, পরে তা সমালোচনার রূপ নেয়।
তথ্যচিত্রের কিছু অর্থনৈতিক হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, খনি থেকে ডেনমার্কের আয়ের হিসাবটি নিয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন।
ডেনমার্কের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম, ড্যানিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (ডিআর), প্রথমে তথ্যচিত্রটির পক্ষে ছিল। কিন্তু পরে তারা এর কিছু অংশ সরিয়ে নেয় এবং তথ্যচিত্রটি প্রত্যাহার করে নেয়।
ডিআর-এর এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেকে মনে করেন, ডিআর তাদের সুনাম রক্ষার জন্য এবং সরকারের সমালোচনার ভয়ে এমনটা করেছে।
গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের মতে, তথ্যচিত্রের আর্থিক দিকটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মূল আলোচনার বিষয় থেকে মনোযোগ সরে যাচ্ছে।
তাদের মতে, ডেনমার্কের অতীতের কিছু ভুল ছিল, যা তারা স্বীকার করে। একইসঙ্গে, ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের জন্য ভালো কিছুও করেছে।
এই বিতর্কের মূল কারণ হল, অতীতের ভুলগুলো নিয়ে ডেনমার্কের মিডিয়া এবং সরকারের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। গ্রিনল্যান্ডের মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্র সেই পুরনো ক্ষতকে আবার জাগিয়ে তুলেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, অতীতের ভুলগুলো এখনো কিভাবে বর্তমান সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।