সাত বছর ধরে নিখোঁজ থাকা ভাইয়ের কঙ্কাল হাতে নিয়ে ঘুরেছেন বোন। অবশেষে মিলল তাঁর সন্ধান, কিন্তু কিভাবে মৃত্যু হল, তা এখনো রহস্য। এমন মর্মান্তিক এক ঘটনার সাক্ষী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা অ্যাশলি ক্রস।
২০১৮ সালের মে মাসে উইলিয়াম ক্রস নামের ২৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর বোন অ্যাশলি ও মা রবিন ফিলিপস উইলিয়ামের সন্ধানে দিনরাত এক করে দেন।
উইলিয়াম নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন এবং মাদকাসক্ত ছিলেন। ঘটনার কয়েক দিন আগেও তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। অ্যাশলি জানান, তাঁর ভাই শুধু একজন মাদকাসক্ত ছিলেন না, তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ।
পরিচিতদের জন্য খাবার কিনে দেওয়া, বন্ধুর ছেলের জন্য খেলনা কিনে দেওয়া, এমনকি কারো প্রয়োজন হলে ধার দেওয়া – এমনটাই ছিল তাঁর স্বভাব।
২০২৩ সালের অক্টোবরে, কেন্টাকি রাজ্যের একটি জঙ্গলে উইলিয়ামের দেহের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেগুলো উইলিয়াম ক্রসের কঙ্কাল। এই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কিভাবে উইলিয়ামের মৃত্যু হয়েছিল?
তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। উইলিয়ামকে সবশেষ কেন্টাকির একটি রাস্তায় দেখা গিয়েছিল, যদিও তিনি টেনেসি অঙ্গরাজ্যে থাকতেন।
স্থানীয় পুলিশ বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে উইলিয়ামের মামলার তদন্তে জটিলতা দেখা দেয়। অবশেষে, স্কট কাউন্টি শেরিফ অফিসের গোয়েন্দা ডেভিড স্টিফেনস ২০২২ সালে এই মামলার তদন্ত শুরু করেন।
গোয়েন্দা স্টিফেনস জানান, ঘটনার সঠিক তদন্তের জন্য তিনি উইলিয়ামের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেন। সাধারণত, কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হলে, তাঁকে সবশেষ যেখানে দেখা গেছে, সেখানকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেই মামলার তদন্ত করে।
তবে এই ক্ষেত্রে, সমন্বয়ের অভাবে তদন্তে অনেক দেরি হয়েছে। বর্তমানে, কেন্টাকি রাজ্যের কর্মকর্তারা এই মামলার তদন্ত করছেন। স্থানীয় শেরিফ ডেভিড স্যামসন জানিয়েছেন, তাঁরা দ্রুত তদন্ত শুরু করবেন এবং উইলিয়ামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
অ্যাশলি ও তাঁর মা জানান, গত সাড়ে ছয় বছরে তাঁদের কাছে উইলিয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের খবর এসেছে। কেউ বলেছে, তাঁকে গুলি করা হয়েছে, আবার কেউ বলেছে, তাঁকে কাঠের গুঁড়ো করার মেশিনে ফেলা হয়েছে।
কেন্টাকি পুলিশ বলছে, তাঁরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। স্কট কাউন্টির গোয়েন্দা স্টিফেনসও উইলিয়ামের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তিনি জানান, কঙ্কাল থেকে ঘটনার কিছু সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
গোয়েন্দা স্টিফেনস মনে করেন, উইলিয়ামের মৃত্যুরহস্যের সঙ্গে জড়িত আরও অনেকে রয়েছে, যাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। উইলিয়ামের পরিবারের সদস্যরা চান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হোক। তাঁরা বিশ্বাস করেন, উইলিয়াম স্বাভাবিকভাবে কোনো ঝর্ণার পাশে গিয়ে মারা যাননি।
গোয়েন্দা স্টিফেনস গত আড়াই বছর ধরে উইলিয়ামকে খুঁজে বের করার জন্য প্রায় ১,৭২১ একর জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া যায়, তখন তিনি এবং একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন।
উইলিয়ামের কঙ্কাল শনাক্ত হওয়ার পর, তাঁর বোন, মা এবং একটি দল মিলে আরও কিছু অংশ খুঁজে বের করেন। অ্যাশলি জানান, তিনি তাঁর ভাইয়ের হাড়গুলো হাতে ধরেছিলেন।
বিষয়টি খুবই কষ্টের ছিল। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কঙ্কালের শরীরে আঘাতের চিহ্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, যাতে মৃত্যুর কারণ জানা যায়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই তাঁরা উইলিয়ামের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
তথ্য সূত্র: পিপলস