শিরোনাম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিয়ে উদ্বেগে অস্ট্রেলীয় শিক্ষাবিদগণ, ভিসা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে এখন আর তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না অনেক অস্ট্রেলীয় শিক্ষাবিদ। দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ।
সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ডিভাইস পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, তাদের ডিভাইসে মার্কিন নীতির সমালোচনা করে কিছু বার্তা পাওয়া গিয়েছিল।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রার্থী এবং অস্ট্রেলিয়ান পোস্টগ্রাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলের কর্মকর্তা জেম্মা লুসি স্মার্ট জানান, তিনি একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন আর সেই ঝুঁকি নিতে রাজি নন।
তিনি বলেন, “আমি এমন একটি বিষয়ে কাজ করি যেখানে বৈচিত্র্য, সাম্য এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানকার আয়োজকরা সরাসরি জানিয়েছেন, সবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা নিরাপদ নয়, বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার ও ভিন্ন চিন্তাধারার সহকর্মীদের জন্য।”
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ন্যাশনাল টার্শিয়ারি এডুকেশন ইউনিয়নের (National Tertiary Education Union) জাতীয় সভাপতি ড. অ্যালিসন বার্নস বলেন, “শিক্ষাবিদগণ এখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন।
এর ফলে মূল্যবান গবেষণা অংশীদারিত্বগুলো বাতিল হচ্ছে, গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং চুক্তিগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। অনেকের মাঝেই সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে।”
আগে, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে হতো।
কিন্তু শোনা যাচ্ছে, এখন অনেককে তাদের শারীরিক অবস্থা ও ব্যবহৃত ওষুধের সাথে তথ্যের মিল না থাকার কারণে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি তাদের আটক বা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘সোসাইটি ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অফ সায়েন্স’ (Society for Social Studies of Science) তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
শিক্ষাবিদদের এই উদ্বেগের কারণে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
অনেক স্কলারশিপ বাতিল করা হচ্ছে এবং অনুদান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জ্ঞানচর্চায় বাধা সৃষ্টি করছে।
এর ফলে, বিশেষ করে তরুণ গবেষকদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অংশ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি প্রার্থী জেসি গার্ডনার-রাসেল জানান, গবেষণা এবং নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাগারগুলোতে উন্নত মানের সরঞ্জাম থাকে, যা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রেই পাওয়া যায়।
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অনুদান কমে গেলে এর প্রভাব আমাদের গবেষকদের ওপরও পড়বে।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক কঠোর নীতি আন্তর্জাতিক জ্ঞানচর্চা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে।
অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই সময়ে এমন পরিবর্তন অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান