যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পের উপর নতুন শুল্ক আরোপ: ভোক্তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আমদানি করা গাড়ির উপর শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপ করা হয়, যা বিশ্বজুড়ে গাড়ি ব্যবসার উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। এই শুল্কের কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা সরাসরি ভোক্তাদের পকেটকে প্রভাবিত করবে।
ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকান গাড়ি কিনুন’ নীতিকে উৎসাহিত করলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে গাড়ির দাম কমার বদলে আরও বাড়তে পারে।
শুল্ক হল আমদানি করা পণ্যের উপর ধার্য করা এক প্রকার কর, যা ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করে থাকে। সাধারণত, এই করের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর, অর্থাৎ ক্রেতাদের উপর গিয়েই পরে, যার ফলস্বরূপ গাড়ির দাম বাড়ে।
ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকেরা এমন একটি ধারণা প্রচার করেছিলেন যে, আমেরিকান গাড়ি কিনলে এই শুল্কের প্রভাব থেকে বাঁচা যাবে। তাঁদের যুক্তি ছিল, বিদেশি গাড়ির দাম বাড়লে, মানুষ আমেরিকান গাড়ি কিনবে।
তবে, বিষয়টি এত সরল নয়। কারণ, আমেরিকান গাড়িগুলোও বিভিন্ন বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘টেসলা মডেল ওয়াই’-এর প্রায় ৭০ শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায়।
আবার ‘ফোর্ড এফ-১৫০’ গাড়ির ক্ষেত্রে এই হার ৪৫ শতাংশ। ফলে, শুল্কের কারণে বিদেশি যন্ত্রাংশের দাম বাড়লে, আমেরিকান গাড়ির দামও বাড়বে।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। ‘কক্স অটোমেটিভ’-এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩০,০০০ ডলারের নিচে দামের প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ির উপর এই ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
এই তালিকায় হন্ডা সিভিক, টয়োটা করোলা, শেভ্রোলেট ট্র্যাক্স ও ট্রেইলব্লেজার, নিসান সেন্ট্রা এবং হন্ডা এইচআর-ভি-এর মতো জনপ্রিয় মডেলগুলোও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ির যন্ত্রাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানি থেকেও অনেক যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়।
তাই, কোনো গাড়ি যদি ১০০ শতাংশ দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়েও তৈরি করা হয়, তাহলেও শুল্কের কারণে তার দাম বাড়বে। কারণ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো কাঁচামালের দামও বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্ক আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর কথা বললেও, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই পরিমাণ রাজস্ব সাধারণ মানুষের জন্য উল্লেখযোগ্য কর হ্রাসে সহায়তা করবে না। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির উৎপাদনও ব্যাহত হতে পারে, যার ফলস্বরূপ বাজারে গাড়ির সংকট দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, এই শুল্কের কারণে গাড়ির দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এমনকি, যে গাড়িগুলোর উপর সরাসরি শুল্ক নেই, সেগুলোর দামও ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও এই পরিস্থিতিতে পড়েছে। বিদেশি গাড়ির দাম বাড়লে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশীয় প্রস্তুতকারকদেরও দাম বাড়াতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের জন্য গাড়ির বাজার আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই জটিল পরিস্থিতিতে, শুল্কের প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বব্যাপী গাড়ি ব্যবসার উপর এর গভীর প্রভাব পড়বে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা