চীনের গবেষকদের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ রোগীর গোপন চিকিৎসা তথ্যে প্রবেশাধিকার দিতে চলেছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
তাদের আশঙ্কা, চীন সরকার এই বিপুল পরিমাণ স্বাস্থ্য তথ্য তাদের নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা কেন্দ্র ইউকে বায়োব্যাংকে সংরক্ষিত এই ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন চীনা গবেষকরা।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বিস্তারিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে এই বায়োব্যাংকে। এখানে সংরক্ষিত তথ্যগুলো মূলত গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহ করা হয়।
যুক্তরাজ্যের সিকিউরিটি সার্ভিস এমআই-ফাইভ (MI5) সতর্ক করে জানিয়েছে, চীনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের দেশের গবেষকদের মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।
তবে, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব ধরনের নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। তাছাড়া, চীনের গবেষকদের ডেটা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার আগে সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হয়েছে।
যদিও, ডেটা সুরক্ষার বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা রয়েছে। তাদের মতে, ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করার পরেও কিছু ক্ষেত্রে রোগীদের শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো ডেটা সুরক্ষা এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে সরকারের কাছে একটি সুস্পষ্ট কৌশল জানতে চেয়েছে। তাদের মতে, নাগরিকদের ডেটার সুরক্ষার বিষয়ে সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে এবং ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, ইউকে বায়োব্যাংকের ডেটা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়া ১৩৭৫টি আবেদনের মধ্যে চীন থেকে এসেছে ২৬৫টি আবেদন, যা মোট আবেদনের প্রায় ২০ শতাংশ।
এর মাধ্যমে চীনের গবেষকরা বায়ু দূষণের প্রভাব এবং স্মৃতিভ্রংশতা (dementia) শনাক্তকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য ডেটা ব্যবহার করতে পারবে।
তবে, চীনের একটি জেনেটিক কোম্পানি বিজিআই (BGI)-এর সঙ্গে যুক্ত একটি গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বিজিআই-এর কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তাদের আশঙ্কা, এই কোম্পানি জেনেটিক ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ডেটা, বিশেষ করে জেনেটিক তথ্য, গোয়েন্দাগিরির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে ব্যক্তির চিকিৎসার ইতিহাসসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান