যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত কি অবৈধভাবে বিতাড়িত হওয়া এল সালভাদরের নাগরিক কিলমার আব্রেগো গার্সিয়ার দেশে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে? এমন একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। জানা গেছে, ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটক হওয়ার পর আব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে-র মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আব্রেগো গার্সিয়ার বিতর্কিত প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এর কয়েকদিন পরেই সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনকে আব্রেগো গার্সিয়ার প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও, ১৫ই মার্চ, মার্কিন সরকার আব্রেগো গার্সিয়াকে এল সালভাদরের একটি কারাগারে পাঠায়, যেখানে পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অনেক সালভাদরীয় এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের রাখা হয়েছিল। যদিও আব্রেগো গার্সিয়ার এমন কিছু সুরক্ষা ছিল যা তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো থেকে বিরত রাখতে পারতো। মার্কিন বিচার বিভাগ আব্রেগো গার্সিয়ার বিতাড়নকে “ভুল” এবং “প্রশাসনিক ত্রুটি” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
হোয়াইট হাউসে এক বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি দাবি করেন, ২০১৯ সালে অভিবাসন আদালত এবং আপিল আদালত উভয়ই রায় দিয়েছিল যে আব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ নামক একটি গ্যাং-এর সদস্য। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়, ২০১৯ সালে মেরিল্যান্ডে একটি হোম ডিপো দোকানের বাইরে কাজ খুঁজছিলেন আব্রেগো গার্সিয়া। তখন তাকে গ্রেপ্তার করে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
একজন পুলিশি সোর্স জানায়, আব্রেগো গার্সিয়া এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিবাসন বিচারকরা তাকে জামিন দিতে অস্বীকার করেন।
তবে, আইনজীবী ডেভিড বিয়ারের মতে, অভিবাসন আদালতের এই সিদ্ধান্ত আব্রেগো গার্সিয়াকে গ্যাং সদস্য হিসেবে রায় দেওয়ার সমতুল্য নয়। বিয়ার আরও বলেন, “ইমিগ্রেশন শুনানিতে, আটককৃত ব্যক্তিকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি পালানোর ঝুঁকি বা সমাজের জন্য বিপদ নন। আব্রেগো গার্সিয়া তার ক্ষেত্রে তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এদিকে, আব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবী সাইমন স্যান্ডোভাল-মোশেনবার্গ জানিয়েছেন, তার মক্কেল কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি। এমনকি অভিবাসন আদালতের কার্যক্রমও কোনো বিচার ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুযায়ী, এমএস-১৩ কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পর, আব্রেগো গার্সিয়া যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরনের অভিবাসন সুবিধা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না বলে জানান হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলার।
তবে, আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো অ্যারন রেইখলিন-মেলনিকের মতে, এমএস-১৩ কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার কারণে আব্রেগো গার্সিয়ার সুরক্ষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়নি।
অন্যদিকে, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে জানিয়েছেন, আব্রেগো গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে “সন্ত্রাসীকে পাচার করার” মতো। তবে আব্রেগো গার্সিয়ার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মার্কিন সরকারকে আব্রেগো গার্সিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা