মেগান কেলির গল্প: ক্যান্সার শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় এক মায়ের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা।
ইংল্যান্ডের গেটসহেডের বাসিন্দা জেন কেলি নামের এক মা তাঁর কিশোরী মেয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আগে চিকিৎসকদের ভুল ও অবহেলার কথা তুলে ধরেছেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ১৬ বছর বয়সী মেগানের শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
প্রথমে চিকিৎসকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি, বরং তাঁরা মেগানকে বিভিন্ন ভাইরাস এবং সাধারণ সংক্রমণের চিকিৎসা দিতে থাকেন।
মেগানের মা জেন কেলি জানান, মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলেও চিকিৎসকরা প্রথমে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। এমনকি একবার এক চিকিৎসক তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “মায়েদের মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে বেশি উদ্বেগে ভুগতে দেখা যায়।”
জেন কেলি নিজেও আগে হডকিন লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। তাই মেয়ের অসুস্থতা দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, কিছু একটা গুরুতর সমস্যা রয়েছে।
চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেগানের রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে স্কুল থেকে তার নাম কাটাতে হয়, কারণ সে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল।
জুন ২০১৯-এ, ১৮ বছর বয়সে, ডাক্তাররা মেগানের কিডনিতে একটি টিউমার খুঁজে পান এবং ক্যান্সার শনাক্ত করেন। পরীক্ষার পর জানা যায়, মেগান চতুর্থ স্তরের ইউইং সারকোমা নামক বিরল ক্যান্সারে আক্রান্ত।
এই ক্যান্সার সাধারণত তরুণ এবং শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
চিকিৎসকরা জানান, ক্যান্সারের কারণে মেগানের ফুসফুস এবং লিম্ফ নোডগুলোতেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এরপরে শুরু হয় মেগানের জীবন বাঁচানোর লড়াই।
কঠিন কেমোথেরাপি নিতে হয় তাকে। মা জেন কেলি সব সময় মেয়ের পাশে ছিলেন। ২০২০ সালের জুনে মেগান সুস্থ হয়ে উঠেছে জানিয়ে চিকিৎসকরা জানান, ক্যান্সার ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে।
কিন্তু বিধি বাম! দুই মাসের মধ্যেই মেগানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ডাক্তাররা জানান, ক্যান্সার আবার ফিরে এসেছে এবং এবার আর কিছুই করার নেই।
এর কয়েক দিন পরেই, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১৯ বছর বয়সে মেগান মারা যায়।
মেয়ের মৃত্যুর পর জেন কেলি ‘মেগান’স রোজ অফ হোপ’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা তৈরি করেন, যা ক্যান্সারে আক্রান্ত ১১ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের সহায়তা করে।
জেন কেলি বলেন, “মেগান ছিল খুবই প্রাণবন্ত, মেধাবী ও হাসিখুশি। আমি সবসময় ভাবি, আজ সে কোথায় থাকত। আমি আশা করি, সে আমাদের কাজে গর্বিত হতো।”
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হলে তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের দেশেও অনেক পরিবারে এমন অভিজ্ঞতা হয়, যেখানে সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় জটিলতা বাড়ে।
তাই, দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: পিপল