শিরোনাম: বিরল মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত তরুণীর জীবনযুদ্ধ: সাহস ও পরিবারের ভালোবাসার গল্প
অ্যামেরিকার আটলান্টার বাসিন্দা, অণিক্স মিডেলটন, একজন তরুণী, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছিলেন সবে।
কিন্তু নিয়তির পরিহাস, ১৮ বছর বয়সেই এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন তিনি, যা তার জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system) হঠাৎ করেই মস্তিষ্কের (brain) উপর আক্রমণ করে বসে, যার ফলে তিনি মানসিক বৈকল্য, খিঁচুনিসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে, অণিক্স যখন পড়াশোনা শুরু করেন, তখন থেকেই তার শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
প্রথমে মাথাব্যথা এবং দুর্বলতা অনুভব করতেন তিনি। ক্লাসে অনিয়মিত হতে শুরু করেন, খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুমের সমস্যাও দেখা যায়। চিকিৎসকরা প্রথমে এটিকে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেন। অণিক্স নিজেও বেশ মানসিক চাপে ছিলেন, যেন তার কাঁধে বিশাল এক বোঝা চেপে বসেছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে, তার তখনকার প্রেমিক অণিক্সকে আটলান্টা শহর থেকে ৩০ মিনিটের দূরের তার বাবা-মায়ের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যান।
সেখানে যাওয়ার কিছু পরেই, তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন। মা-বাবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে ডাক্তাররা জানান, অণিক্স সম্ভবত সিজোফ্রেনিয়ায় (schizophrenia) আক্রান্ত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা যখন জানান, তার এই রোগ হয়েছে, তখন সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পরে যান।
এরপর তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। খিঁচুনি (seizures) বেড়ে যাওয়ায়, ডাক্তাররা দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানা যায়, অণিক্স অ্যান্টি-এনএমডিএ রিসেপ্টর এনসেফ্যালাইটিস (anti-NMDA receptor encephalitis) নামক এক বিরল অটোইমিউন (autoimmune) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে।
এই রোগের কারণে অণিক্সের শরীরে গুরুতর কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।
তার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে তিনি কথা বলতে, হাঁটতে ও খেতে পর্যন্ত সমস্যা অনুভব করতে শুরু করেন।
এই রোগ এতটাই বিরল যে, প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজনের হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানান, এই রোগটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেয় এবং মারাত্মক রূপ নিলে জীবনহানিরও কারণ হতে পারে।
চিকিৎসার মাধ্যমে অণিক্সের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এরপর ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে আসতে শুরু করে।
১১৮ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর, তিনি ধীরে ধীরে কথা বলা, হাঁটাচলা এবং খাবার খাওয়ার মতো স্বাভাবিক কাজগুলো পুনরায় করতে সক্ষম হন।
অণিক্সের মা, চেরিস “রিস” মিডেলটন, তার মেয়ের এই কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন।
তিনি জানান, মেয়ের অসুস্থতার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন তারা, এমনকি থাকার জায়গাও হারাতে হয়েছে।
তবে, তারা ভেঙে পড়েননি। এখন তারা অণিক্সকে সুস্থ করে তোলার জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
অণিক্স বর্তমানে সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছেন।
তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান এবং কাজ করতে চান। স্মৃতিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
চেরিস মিডেলটন, এই বিরল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান।
তিনি অন্যান্য রোগীদের পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের সহায়তা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও তিনি এই বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
অণিক্স মিডেলটনের এই কঠিন লড়াই আমাদের সকলের জন্য এক দৃষ্টান্ত।
তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রতিকূলতা যতই কঠিন হোক না কেন, সাহস, মনোবল এবং পরিবারের ভালোবাসার মাধ্যমে তা জয় করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: পিপল