বিশ্বের বৃহত্তম গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিল। দেশটির বিশাল সংখ্যক গবাদি পশু পালন করা হয় আমাজন অঞ্চলে, যা পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বনভূমি উজাড় করে সেখানে গবাদি পশুর জন্য চারণভূমি তৈরি করা হচ্ছে, ফলে ধ্বংস হচ্ছে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। পরিবেশবিদ এবং ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলো বনভূমি ধ্বংস না করে উৎপাদিত মাংসের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
কিন্তু মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের জটিলতার কারণে অনেক সময় আসল উৎস খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আমাজনে গরু প্রতিপালনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এক ধরনের ‘পশু পাচার’ (cattle laundering)। জন্ম থেকে শুরু করে কসাইখানায় পৌঁছানো পর্যন্ত গরুর জীবন বহু খামারের মধ্যে আবর্তিত হয়।
মাংস প্রক্রিয়াকরণকারী বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করার আগে, এইসব গরু তাদের জীবনের প্রায় ৭৫ শতাংশ সময় কাটায় সরবরাহকারী খামারে। এই পদ্ধতির কারণে নজরদারিতে ফাঁকফোকর তৈরি হয়, যার ফলে অবৈধ বা বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত খামার থেকে আসা গরুগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রবেশ করে।
ব্রাজিলিয়ান পরিবেশ সংস্থা ‘আইবিএএমএ’ (IBAMA) বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত খামারগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারের ভোক্তারা, বিশেষ করে যারা ব্রাজিল থেকে আসা গরুর মাংস কেনেন, তাদের পক্ষে নিশ্চিত হওয়া কঠিন যে তাদের খাদ্য বনভূমি ধ্বংসের কারণ হচ্ছে কিনা। কারণ সরবরাহ শৃঙ্খলটি সম্পূর্ণরূপে নিরীক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
মাংস ব্যবসার এই জটিলতা এবং স্বচ্ছতার অভাবের কারণে অনেক সময় ক্রেতারা অজান্তেই আমাজনের বনভূমি ধ্বংসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে, এবং এর একটি বড় কারণ হল বনভূমি ধ্বংস। ব্রাজিলের আমাজনে বনভূমি ধ্বংসের পেছনে গবাদি পশু পালন একটি প্রধান কারণ।
তাই, ভোক্তাদের সচেতন হওয়া এবং খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। মাংস কেনার সময় সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদিত মাংসকে বেছে নেয়া যেতে পারে। এতে বনভূমি রক্ষার পাশাপাশি পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সহায়তা করা সম্ভব হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান