ব্রিটিশ লেখিকা লামোর্না অ্যাশের খ্রিস্ট ধর্ম অন্বেষণ: এক অনুসন্ধানী যাত্রা।
উত্তর লন্ডনের এক শান্ত পরিবেশে বসে, ২০২১ সালের গোড়ার দিকে, লামোর্না অ্যাশ নামের এক ব্রিটিশ লেখিকা তাঁর অনুসন্ধানী যাত্রা শুরু করেন। তাঁর কৌতূহলের কারণ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু, যারা একসময় কমেডি করতেন, তাঁদের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ এবং পুরোহিত হওয়ার ইচ্ছা।
এই ঘটনা তাঁকে নাড়া দেয়। তাঁর মনে হয়, এই পরিবর্তনের কারণ কী? এর গভীরতা কতটুকু?
শুরুতে, অ্যাশ তাঁদের সাক্ষাৎকার নেন এবং তাঁদের বিশ্বাসের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। পুনরুত্থান, স্বর্গ, শয়তান—এসব বিষয়ে তাঁদের মতামত জানতে চান। কিন্তু তাঁদের কথা শুনে নয়, বরং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে থাকার মাধ্যমে তিনি তাঁদের বিশ্বাসের গভীরতা উপলব্ধি করেন।
তিনি বুঝতে পারেন, এই বিশ্বাস তাঁদের জীবনকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই পরিবর্তন তাঁকে একদিকে যেমন বিস্মিত করে, তেমনই কিছুটা ভীতও করে তোলে।
এরপর, অ্যাশ তাঁর অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন ধরনের খ্রিস্টানদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতে চান, বিভিন্ন মানুষ কীভাবে এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর মনে একটি প্রশ্ন ঘুরতে থাকে: “আমি কি এক বছরের মধ্যে খ্রিস্টান হতে পারি?”
এই কৌতূহল থেকেই তাঁর যাত্রা শুরু হয়, যা তাঁকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। তিনি ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, কোয়েকার, পেন্টেকোস্টাল, ইভাঞ্জেলিক্যালসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানদের সঙ্গে মিশেছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেছেন।
তাঁর অনুসন্ধানে, অ্যাশ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মের প্রতি এক নতুন আগ্রহ লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন, তাঁর প্রজন্মের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করছেন। তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে আলোচনার ধরনও আগের প্রজন্মের থেকে আলাদা।
নব্বইয়ের দশকের নাস্তিক্যবাদীদের থেকে তাঁরা অনেক দূরে। সেই সময় ধর্মকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হতো। কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় চেতনার প্রতি সহনশীলতা ও উন্মুক্ততা বেশি দেখা যায়।
তাঁদের এই মানসিকতার কারণ হতে পারে অনিশ্চয়তাপূর্ণ আধুনিক জীবন, যেখানে বৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো তাঁদের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করছে।
কোভিড-১৯ অতিমারীও এই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই সময় অনেক মানুষ জীবনের অন্য পথের সন্ধান করতে শুরু করেন। চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রার্থনা অ্যাপগুলো ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ে এবং গুগলে ‘প্রার্থনা’ বিষয়ক অনুসন্ধানও বাড়ে।
গবেষণা দেখা গেছে, মহামারীর সময়ে ধর্মীয় বিশ্বাস আছে এমন ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে মানসিক দিক থেকে বেশি স্থিতিশীল ছিলেন।
অ্যাশ তাঁর অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে স্কটল্যান্ডের আয়োনা দ্বীপে যান, যেখানে খ্রিস্টধর্ম প্রথম প্রবেশ করেছিল। সেখানে তিনি একটি আশ্রমে কয়েক দিন কাটান। সেখানকার প্রার্থনা, প্রকৃতির নীরবতা এবং সম্প্রদায়ের মানুষের সান্নিধ্য তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
তিনি অনুভব করেন, জীবনের অনেক গ্লানি যেন ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে।
আয়োনায় কাটানো সময় অ্যাশের জীবনকে নতুন পথে চালিত করে। তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আগের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিয়েছে।
তাঁর মধ্যে এক ধরনের সাহস জন্মায়, যা আগে ছিল না। যদিও তিনি খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি, তবে এই যাত্রা তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বর্তমানে, অ্যাশ তাঁর গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘ডোন্ট ফরগেট উই আর হেয়ার ফরএভার: এ নিউ জেনারেশনস সার্চ ফর রিলিজিয়ন’। বইটিতে তিনি তরুণ প্রজন্মের ধর্মীয় অনুসন্ধানের চিত্র তুলে ধরেছেন।
তাঁর এই যাত্রা আমাদের দেখায়, কীভাবে মানুষ আজও জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরে এবং বিশ্বাসের পথে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে নেয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান