সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে একটি শহরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। নিহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় কিছু যোদ্ধা রয়েছে।
সংঘর্ষের কারণ হিসেবে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি অডিও ক্লিপ, যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দামেস্কের কাছাকাছি জারমানা শহরে মূলত ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এই শহরেই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মালিয়াহ ও অন্যান্য সুন্নি অধ্যুষিত এলাকা থেকে আসা কিছু লোক জারমানায় হামলা চালায়।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে “কিছুক্ষণ ধরে বন্দুকযুদ্ধ” হয়, এরপর নিরাপত্তা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মন্ত্রণালয় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
নিহতদের মধ্যে সিরিয়ার জেনারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের দুই সদস্য, জারমানার ৬ জন ড্রুজ যোদ্ধা এবং তিনজন “হামলাকারী” রয়েছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জারমানার ড্রুজ সম্প্রদায় এক বিবৃতিতে এই “অযৌক্তিক সশস্ত্র হামলার” নিন্দা জানিয়েছে। তারা অডিও ক্লিপটিকে ভিত্তিহীন এবং বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে।
ড্রুজ নেতা মারওয়ান কিওয়ান এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই অডিওটি আমি তৈরি করিনি। যারা এটি তৈরি করেছে, তারা খারাপ উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছে, যা সিরিয়ার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।”
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অডিও ক্লিপটির উৎস খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংঘর্ষ সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন এরই মধ্যে গত মাসের ভয়াবহ রক্তপাতের কারণে আতঙ্কে রয়েছে।
বাশার আল-আসাদের অনুগত আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের পর, উত্তর-পশ্চিমের তারতুস ও লাটাকিয়া প্রদেশে প্রতিশোধমূলক হামলায় কয়েকশ’ মানুষ নিহত হয়।
প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ড্রুজ সম্প্রদায়, যারা একটি আরবীয় সংখ্যালঘু এবং ইসলাম থেকে উদ্ভূত একটি ধর্ম পালন করে, তারা নিজেদের এলাকা রক্ষার জন্য সশস্ত্র হয়েছে।
দামেস্কে নতুন নেতৃত্ব সব অস্ত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বললেও ড্রুজ যোদ্ধারা এতে রাজি নয়। তাদের দাবি, দামেস্ক সরকার তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাত থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা