চীনের অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসার সন্ধানে নতুন দিগন্ত: ভিডিও চ্যাট ও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জনপ্রিয়তা।
বর্তমান যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা যেন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। প্রযুক্তির হাত ধরে ডেটিংয়ের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে ভিডিও চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে প্রেম খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা। যেখানে কয়েক হাজার দর্শক একসঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিং দেখেন এবং মন্তব্য করেন।
চীনের এই নতুন ডেটিং সংস্কৃতি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা ছিল রেকর্ড ২৪ কোটি। জনসংখ্যা কমে যাওয়া ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে চীনের সরকার অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের বিয়ে করতে এবং সন্তান নিতে উৎসাহিত করছে। এমনকি, তরুণদের জন্য ডেটিংয়ের সুযোগ তৈরি করতে স্থানীয় সরকারগুলোকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও পরিবার গঠনের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, চীনের অনেক অবিবাহিত নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী ডেটিংয়ের পরিবর্তে ঝুঁকছেন লাইভ ভিডিও চ্যাটের দিকে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে ডেটিংয়ের জন্য সময় বের করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
চীনের ‘সাইবার ম্যাচমেকার’ বা অনলাইন ঘটকদের মাধ্যমে এই ভিডিও চ্যাটগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এদের কাজ হলো—আলোচনা শুরু করা, কৌতুক করা, কথোপকথন পরিচালনা করা এবং কখনো সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া। এই ম্যাচমেকাররা সাধারণত চীনের জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ‘সিয়াওহংশু’ (Xiaohongshu) বা রেডনোট-এর মতো প্ল্যাটফর্মে লাইভ করেন।
যেমন, তিয়ান সিন নামের একজন সাইবার ম্যাচমেকার আছেন, যিনি দিনের বেলায় একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, আর রাতের বেলায় তিনি হয়ে ওঠেন ভার্চুয়াল ডেটিংয়ের হোস্ট। তার অ্যাকাউন্টে অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
তিনি জানান, এই ধরনের চ্যাটগুলোতে সহানুভূতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়।
ভিডিও চ্যাটে অংশগ্রহণকারীরা তাদের বয়স, ওজন, উচ্চতা, পেশা, আয়, রাশি, শখ এবং সঙ্গীর প্রত্যাশা সম্পর্কে তথ্য দেন। এরপর তারা তাদের দৈনন্দিন জীবন ও কাজ সম্পর্কে আলোচনা করেন। অনেক সময় ক্যামেরার সামনেই তারা রাতের খাবার খান, অথবা মেকআপ করেন।
চীনের একটি ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা iiMedia Research-এর তথ্য অনুযায়ী, ৩০ শতাংশের বেশি অবিবাহিত তরুণ-তরুণী জানিয়েছেন, তাদের ব্যস্ত কর্মজীবনের কারণে ডেটিং করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চীনের অনেক কোম্পানিতে কর্মীদের দিনে ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতে হয়।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে সামাজিক চাপ এড়াতে ‘লাইং ফ্ল্যাট’ বা কম কাজ করার প্রবণতা বেছে নিচ্ছেন, যার ফলস্বরূপ তারা অবিবাহিত থাকতেই পছন্দ করেন।
ঐতিহ্যবাহী বিয়ের বাজারগুলোতে (যেখানে পরিবারের সদস্যরা অবিবাহিত ছেলে-মেয়েদের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজে বেড়ান) অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা আগ্রহ দেখান না। তাদের মতে, এই ধরনের ভিডিওগুলো অ্যাপের চেয়ে অনেক বেশি মজাদার ও আকর্ষণীয়। কারণ, এখানে প্রোফাইলের ছবি ছাড়াও একজন মানুষের কথা বলার ধরন ও আচরণও দেখা যায়।
চীনের এই নতুন ডেটিং সংস্কৃতি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ডেটিংয়ের ধারণাও বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
আমাদের দেশেও আজকাল অনলাইনে ডেটিংয়ের প্রবণতা বাড়ছে। তবে চীনের এই ভিডিও চ্যাটিংয়ের ধারণা আমাদের সংস্কৃতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস