সত্তর বছর বয়স একটি বিশাল মাইলফলক। আর এই বিশেষ দিনে মাকে সারপ্রাইজ দিতে আট ভাই-বোন মিলিত হয়েছিলেন।
আট ভাইবোনের এই একত্রিত হওয়ার ঘটনা যেন এক দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে ভালোবাসার বাঁধন অটুট রাখতে দূরত্বের কোনো বাধা থাকে না। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আট ভাই-বোনের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার কাজটি সহজ ছিল না।
তবে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার টেনেসির গ্যাটলিনবার্গে। এখানে এক অপ্রত্যাশিত পারিবারিক পুনর্মিলন আয়োজন করা হয়েছিল।
এই আয়োজনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সন্তানরা, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের মাকে সারপ্রাইজ দেওয়া। পরিবারের একজন সদস্য, তামারা ওয়েদারবি জানান, “গোপন কথাটি রক্ষা করা বেশ কঠিন ছিল, বিশেষ করে যখন আমরা কয়েকজন মায়ের কাছাকাছিই থাকি।
আমরা বাবা যদি কোনোভাবে সব ফাঁস করে দেন, সেই বিষয়ে চিন্তিত ছিলাম।”
মা-বাবার একসাথে এই ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। তবে তাদের এই ভ্রমণের কয়েক দিন আগে বাবার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়।
মা তখন যাত্রা বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না, তিনি এই ভ্রমণে যাওয়ার জন্য একপ্রকার জেদ ধরেছিলেন।
তামারা আরও জানান, “বাবা আমাদের কয়েক মাস আগে একটি গ্রুপ টেক্সট মেসেজে বিষয়টি জানান, যেখানে মা ছিলেন না।
এর দশ মিনিটের মধ্যেই আমরা সবাই আমাদের সময়সূচী পরিবর্তন করতে রাজি হয়ে যাই।”
ভাই-বোনদের মধ্যে যারা ইন্ডিয়ানা, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা এবং ওকলাহোমা থেকে আসছিলেন, তারা সবাই তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।
গ্যাটলিনবার্গে এই সারপ্রাইজের স্থান নির্বাচনও ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
কয়েক বছর আগে তারা সবাই মিলে এখানে একটি ভ্রমণে এসেছিলেন, যা ছিল খুবই আনন্দদায়ক। তাই, মায়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে সবাই মিলে আবার সেখানে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এত বড় একটি পরিবারের জন্য সবকিছু গুছিয়ে আনা সহজ ছিল না।
আট ভাইবোনের সময় ও সুযোগের সমন্বয় করা বেশ কঠিন ছিল।
তামারা বলেন, “সাধারণত আমরা কোথায় মিলিত হব, সেই তারিখ ঠিক করতে অনেক সময় নিতাম।
তবে মায়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে, আমরা বাবার উপরই সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং সবাই তাতে রাজি হয়ে যাই।”
যখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হলো, তখন আবেগপূর্ণ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
তামারা জানান, “আমরা যখন সেখানে যাচ্ছিলাম, তখন কয়েকজন একসঙ্গে গাড়িতে ছিলাম।
আমরা ভাবছিলাম, মা কি আমাদের সবাইকে দেখে কেঁদে ফেলবেন? আমরা বুঝতেই পারিনি, এই সারপ্রাইজ তার কাছে কতটা আনন্দের হবে।”
বাস্তবে, মায়ের চোখে আনন্দের অশ্রু দেখা গিয়েছিল।
এই পরিবারের কাছে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা তাদের এই আয়োজন থেকেই স্পষ্ট।
তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং প্রতি বছর জুনে পারিবারিক ভ্রমণে একত্রিত হন।
এই ভ্রমণে মা-বাবা, ভাই-বোন, তাদের স্ত্রী-স্বামী এবং ছেলে-মেয়েসহ প্রায় ৪৪ জন সদস্য অংশ নেন।
এই পরিবারের আট ভাইবোনের মধ্যে গভীর বন্ধন বিদ্যমান।
তাদের কাছে, একসঙ্গে থাকাটা শুধু শারীরিক নৈকট্য নয়, বরং শক্তিশালী পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার একটি অঙ্গীকার।
জন্মদিনের দিনে মাকে একসঙ্গে পেয়ে মা বলেছিলেন, “পুরোনো সেই দিনগুলোর মত, যখন জীবন ছিল অনেক সহজ।
কোনো সঙ্গী ছিল না, নাতি-নাতনিও ছিল না, শুধু আমরা আটজন ছিলাম।
একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই।”
তথ্য সূত্র: পিপলস