ক্যাথলিক চার্চের প্রধান এবং বিশ্বের প্রায় ১৩০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। এই খবরটি সারা বিশ্বে শোকের ছায়া ফেলেছে।
পোপ ফ্রান্সিস দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি ফুসফুসে প্রদাহের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে জানানো হয়, পোপ ফ্রান্সিস ২০২১ সালের ২১শে এপ্রিল ইস্টার সানডেতে ভ্যাটিকানের সান্তা মার্তার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ই ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবন ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর। তিনি শুধু একজন ধর্মগুরুই ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন সংস্কারক এবং মানবতাবাদী নেতা। পোপ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেছেন। একসময় তিনি নাইটক্লাবের বাউন্সার এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজও করেছেন। তিনি সাহিত্যেও আগ্রহী ছিলেন এবং শিক্ষকতাও করেছেন।
২০১৩ সালে পোপ হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়। তিনি ছিলেন প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ, প্রথম জেসুইট এবং গত আট শতাব্দীর মধ্যে প্রথম ইউরোপের বাইরের পোপ। তাঁর সময়ে তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমার মানুষ গরিব, আর আমিও তাদেরই একজন।’
পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে ক্যাথলিক চার্চে কিছু সংস্কার হয়েছে, যা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি সবসময় চার্চকে আরও খোলামেলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় চার্চের প্রথাগত ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে, কিন্তু তিনি তাঁর নীতিতে অবিচল ছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনারও জন্ম দিয়েছেন। তাঁর সময়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো নতুন করে সামনে আসে এবং তিনি এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে শুধু ক্যাথলিক সম্প্রদায় নয়, বরং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর আদর্শ ও মানবতাবাদী চিন্তা-চেতনা যুগে যুগে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।
তথ্য সূত্র: পিপলস