কানাডার জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থবারের মতো জয়লাভ করলেন মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি। এই নির্বাচনে জয়লাভের পেছনে প্রধান কারণ ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি এবং কানাডার কিছু অংশ দখলের হুমকি।
সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে ভোটারদের প্রধান প্রশ্ন ছিল, ট্রাম্পের সঙ্গে কে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে।
কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে লিবারেল পার্টি, এমনটাই জানিয়েছে দেশটির জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিবিসি।
হাউস অফ কমন্সের ৩৪৩ জন সদস্যের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়। সরকার গঠনের জন্য একটি দলকে ১৭২টি আসনে জয়ী হতে হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক ও দখলের হুমকি ছিল এই নির্বাচনের অন্যতম প্রধান বিষয়। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসন এবং মাদক পাচার প্রতিরোধে যথেষ্ট কাজ করেনি।
এর ফলস্বরূপ, তিনি কানাডার পণ্যগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ এবং কানাডার জ্বালানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এছাড়াও, তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করারও হুমকি দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জেরে অনেক কানাডিয়ান নাগরিক উদ্বেগে ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের ফলাফলে এর একটি প্রভাব পড়েছে।
নির্বাচনের আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক কানাডিয়ান তার ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে ক্ষমতায় ছিলেন ট্রুডো।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে তার জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল।
কানাডার প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভরের জনপ্রিয়তা থাকলেও, ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণে ফেব্রুয়ারিতে লিবারেল পার্টির প্রতি জনসমর্থন বাড়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফিলিপ জে ফোরনিয়ারের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতি কানাডার ইতিহাসে খুব কমই দেখা যায়।
তিনি আরও যোগ করেন, ট্রাম্পের হুমকিগুলো পয়েলিভরের থেকে অনেক ভোটারকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে মার্ক কার্নি ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত এবং এর আগে অনেকবার সংকট মোকাবেলা করেছি। আমরা পাল্টা শুল্ক আরোপ করব এবং আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা দেব।’
নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভার কার্লেটন আসন থেকে নির্বাচিত ব্রুস ফ্যানজয়ের কাছে হেরে যান। এছাড়া, নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) প্রত্যাশার চেয়ে কম আসন পাওয়ায় দলটির নেতা জগমিত সিং পদত্যাগ করেছেন।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অটোয়ায় এক সমাবেশে কার্নি বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা একটি জাতি গঠন করেছি। আমরা আমাদের নিজেদের ঘরে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেব। আমরা লাখ লাখ আবাসনের ব্যবস্থা করব এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।’
অন্যদিকে, নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে পয়েলিভার বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানাই। আমরা অনেক আসন অর্জন করেছি এবং ১৯৮৮ সালের পর এবারই আমাদের দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।’
তিনি ট্রাম্পের শুল্ক ও দখলের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিবারেল পার্টির সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
যদি লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে কার্নি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন এবং ২৬শে মের মধ্যে বাজেট পরিকল্পনা তৈরি করবেন।
সংখ্যালঘুতা না পেলে, অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে পার্লামেন্টে আইন পাস করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা