চীন হুঁশিয়ারি: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার সময় চীনের স্বার্থকে খাটো করবেন না অন্য দেশগুলো।
বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। বেইজিং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, যেসব দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক থেকে অব্যাহতি চাইছে, তারা যেন চীনের স্বার্থের বিনিময়ে কোনো চুক্তি না করে।
চীন মনে করে, এমন কোনো পদক্ষেপ আপসকামিতার শামিল, যা শেষ পর্যন্ত সবার জন্যই ক্ষতিকর হবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আপস শান্তি আনতে পারে না, আর সমঝোতা সম্মান বয়ে আনে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাময়িক সুবিধার জন্য অন্যের স্বার্থ ত্যাগ করে তথাকথিত ছাড় পাওয়া বাঘের সঙ্গে আলোচনার মতো।
এতে উভয় পক্ষেরই পরাজয় হয় এবং সংশ্লিষ্ট সবার ক্ষতি হয়।’
চীন এই বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে অন্যান্য দেশের প্রচেষ্টাকে সম্মান করে, তবে দেশগুলোকে অবশ্যই ‘ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে’ এবং ‘ইতিহাসের সঠিক পথে’ দাঁড়াতে হবে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো দল যদি চীনের স্বার্থের বিনিময়ে কোনো চুক্তি করে, তবে চীন তা গ্রহণ করবে না এবং এর উপযুক্ত জবাব দেবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেতে চাওয়া দেশগুলোকে চীন থেকে বাণিজ্য কমাতে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কথা ভাবছেন, যাতে তারা চীন থেকে অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করা বন্ধ করে এবং এশীয় পরাশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশ থেকে আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি দেশের ওপর থেকে ‘পাল্টা’ শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছে, তবে তারা চীনের রফতানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে, যা ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে।
চীনও এর জবাব দিয়েছে। তারা মার্কিন রফতানির ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট মিনুচিন (সংশোধনযোগ্য) জানিয়েছেন, ৭০টির বেশি দেশ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর একটা প্রভাব দেখা যেতে পারে।
কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। এছাড়া, বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘আধিপত্যবাদী রাজনীতি’ এবং ‘একতরফা জুলুম’-এর অভিযোগ এনেছে।
মুখপাত্র বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যদি ‘জঙ্গলের আইনে’ ফিরে যায়, তবে সব দেশই ভুক্তভোগী হবে।’
চীন এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংহতি ও সমন্বয় জোরদার করতে এবং একতরফা জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা