এলোন মাস্ক এবং তাঁর কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্ত, মামলা ও নিয়ন্ত্রক নজরদারির কারণে অন্তত ২.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার বেশি, যেখানে ১ মার্কিন ডলার = ১০৫ টাকা) আইনি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে বলে জানা গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট সিনেটরদের একটি নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে মাস্কের তথাকথিত “সরকার দক্ষতা বিভাগ” (Doge) এর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, মাস্ক সম্ভবত তার প্রভাব খাটিয়ে আইনি দায় এড়াতে চেষ্টা করতে পারেন।
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সিনেট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির স্থায়ী উপ-কমিটির ডেমোক্রেট সদস্যদের পক্ষ থেকে মাস্কের বিরুদ্ধে ১১টি আলাদা সংস্থার অধীনে থাকা ৬৫টি সম্ভাব্য বা বাস্তব পদক্ষেপের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা মাস্ক এবং তার কোম্পানিগুলোর, যেমন – টেসলা, স্পেসএক্স ও নিউরালিঙ্কের সম্ভাব্য আর্থিক দায়-দায়িত্বের হিসাব করেছেন, যা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র টেসলার বিরুদ্ধে স্ব-চালিত গাড়ির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগে ১.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১২,৫০০ কোটি টাকার বেশি) জরিমানা হতে পারে।
তবে, এই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হিসাবের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে মাস্ক যেসব তদন্ত এড়িয়ে যেতে পারেন, সেই হিসাব ধরা হয়নি। এছাড়াও, মাস্কের প্রশাসনের সঙ্গে তার কোম্পানির সম্ভাব্য চুক্তি, যেমন স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবার চুক্তিগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “যদিও ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারের হিসাব একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং রক্ষণশীল অনুমান, তবে সরকারের অভ্যন্তরে তার অবস্থানের কারণে মাস্ক যে আইনি ঝুঁকি এড়িয়ে সুবিধা পেতে পারেন, তার প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক বেশি।”
ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য মাস্কের স্বার্থের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগকে কয়েক মাস ধরে হালকাভাবে দেখিয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ফেব্রুয়ারির শুরুতে বলেছিলেন, “যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেবেন।”
ডেমোক্র্যাটরা প্রশাসনের কাছে মাস্ক কীভাবে এই সংঘাতগুলো মোকাবেলা করছেন, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে এই বিতর্কিত বিলিওনেয়ারকে রাখতে চাইছে।
ডেমোক্রেট সিনেটর জ্যাঁ শাহীন এই মাসের শুরুতে মাস্ককে লক্ষ্য করে একটি বিল পেশ করেছেন।
এই বিলে বিশেষ সরকারি কর্মচারী দ্বারা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে সরকারি চুক্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “কংগ্রেসের সদস্যদের একাধিক অনুরোধ সত্ত্বেও, ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়ে কোনো প্রাসঙ্গিক নথি বা তথ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া, এই পদক্ষেপগুলোর জন্য কর্তৃপক্ষ কিসের উপর নির্ভর করেছে, অথবা মাস্ক কীভাবে এই সংঘাতগুলো মোকাবেলা করছেন, সে সম্পর্কেও কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।”
মাস্কের স্বার্থের সংঘাত ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) সহ একাধিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত, যারা স্পেসএক্সের রকেট উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধান করে।
এছাড়াও, ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NHTSA)-এর সঙ্গেও তার সংঘাত রয়েছে, যেখানে টেসলার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত চলছে।
ফেব্রুয়ারিতে, Doge স্ব-চালিত গাড়ির প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ NHTSA-এর কর্মীদের বরখাস্ত করে।
তদন্ত বিষয়ক স্থায়ী উপ-কমিটি একটি দ্বিদলীয় উপ-কমিটি। এর নেতৃত্বে রয়েছেন কানেকটিকাটের ডেমোক্রেট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল।
উপ-কমিটির প্রতিবেদনে ট্রাম্প, নির্বাহী বিভাগ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে মাস্কের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নজরদারি করার দাবি জানানো হয়েছে।
এর মধ্যে মাস্কের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোকে দেওয়া প্রধান চুক্তিগুলোর স্বাধীন নিরীক্ষণের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি, তিনি যত প্রভাবশালী বা ধনীই হোন না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নন।
এর থেকে কম কিছু করা হলে, আধুনিক অভিজাততন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণে আমেরিকার নীরব দর্শক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান