একুয়েডরের কোকেন উপকূল: মাদক পাচারে জড়িত হওয়া জেলে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান
একুয়েডর, এক সময়ের শান্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি দেশ, বর্তমানে মাদক ব্যবসার ভয়ংকর জালে আবদ্ধ। দেশটির জেলে সম্প্রদায়ের জীবন আজ গভীর সংকটে, যেখানে জীবিকার তাগিদে অনেককে পা বাড়াতে হচ্ছে মাদক চোরাচালানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পথে।
অন্যদিকে দারিদ্র্যের কষাঘাত, অন্যদিকে জীবনহানির ঝুঁকি—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে তারা দিশেহারা।
মানতা শহরের এক জেলের কথা ধরা যাক, যিনি একসময় টুনা মাছ ধরে জীবন চালাতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। মাছ ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে, সমুদ্রযাত্রা দীর্ঘ হয়, আর তেমন আয়ও হয় না।
তাই তিনি জানান, “আগে মাসে ৩০০ ডলার আয় করতাম, কিন্তু মাদক—সাদা টাকার হাতছানি!” কোকেন পাচার করে মেক্সিকোতে পৌঁছে দিলে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ডলার পান। এই লোভনীয় প্রস্তাবনার কারণে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত।
তিনি জানান, “যদি আরও একবার সুযোগ আসে, তাহলে হয়তো চেষ্টা করব। মায়ের জন্য একটা বাড়ি কিনতে চাই।”
এই ব্যবসার কৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, কিভাবে স্পিডবোটে করে কোকেন নিয়ে যাওয়া হয়। মেক্সিকোর উপকূলের কাছে একটি নৌকায় মাল খালাস করা হয়, আর ফেরার পথে মাছ নিয়ে আসা হয়, যাতে কারো সন্দেহ না হয়।
তিনি ভীত, কারণ এই পথে রয়েছে জলদস্যু, খারাপ আবহাওয়া, এবং কোস্টগার্ডের টহলদারি। ধরা পড়লে জীবন হারানোরও সম্ভবনা থাকে।
একুয়েডরের নৌবাহিনীও মাদক পাচার বন্ধ করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা প্রায়ই বিপদগ্রস্ত জেলেদের উদ্ধার করে, কিন্তু তাদের প্রধান কাজ হলো মাদক চোরাচালান প্রতিহত করা।
তারা জানতে পেরেছে, মাদক পাচারকারীরা গলাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কাছে তাদের স্পিডবোটের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করে। তাই নৌবাহিনী জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে চাইছে।
অন্যদিকে, এই মাদক ব্যবসার কারণে একুয়েডরের উপকূলীয় শহরগুলোতে সহিংসতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই সমস্যা একা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট নোবোয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেও রাজি আছেন।
তবে, তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব একুয়েডরের সামরিক বাহিনী ও পুলিশের হাতেই থাকবে।
মাদক ব্যবসার বিস্তার শুধু একুয়েডরের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে মাদক পাচার বাড়ে এবং সীমান্তে অভিবাসন সমস্যাও তৈরি হয়।
প্রেসিডেন্ট নোবোয়া চান, একুয়েডরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করতে এবং মাদক পাচার বন্ধ করতে, যাতে দেশের মানুষ ভালো জীবন যাপন করতে পারে এবং উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN