সিনেমার পর্দায় আমেরিকার এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন পরিচালক রায়ান কুগলার। তাঁর নতুন ছবি ‘সিনার্স’ (Sinners), যেখানে কুখ্যাত ‘জিম ক্র’ যুগের প্রেক্ষাপটে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবন সংগ্রামের এক ভয়ংকর চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে, কারণ এটি কেবল একটি ভৌতিক চলচ্চিত্র নয়, বরং আমেরিকার ইতিহাসের এক গভীর ক্ষতকে উন্মোচন করে।
‘সিনার্স’-এর গল্পটি গড়ে উঠেছে স্যামি নামের এক তরুণ সঙ্গীতশিল্পীকে কেন্দ্র করে। সে তার বাবার চার্চ এবং রক্ষণশীল জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাই সে ব্লুজ সঙ্গীত পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জনের স্বপ্ন দেখে। স্যামির দুই চাচাতো ভাই শিকাগো থেকে ফিরে এসে মিসিসিপিতে একটি জুক জয়েন্ট (স্থানীয় বিনোদন কেন্দ্র) খোলে, যা তাদের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তবে তাদের এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয় না, কারণ শ্বেতাঙ্গ ভ্যাম্পায়ারদের আগমন ঘটে, যারা তাদের জীবনে বিভীষিকা নিয়ে আসে।
ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। কুখ্যাত ‘জিম ক্র’ আইন ছিল তাদের ওপর চরম বৈষম্যমূলক শাসনের প্রতীক। এই সময়ে, অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ ভালো জীবনের আশায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছিল, যা ‘দ্য গ্রেট মাইগ্রেশন’ নামে পরিচিত। এই অভিবাসন তাদের জীবনে নতুন সুযোগ এনে দিলেও, শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়েছিল তাদের।
‘সিনার্স’-এ এই বিষয়গুলো অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা কীভাবে প্রতিকূলতার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নেয় এবং নিজেদের কমিউনিটিকে টিকিয়ে রাখে। তাদের গান, নাচ আর জীবনযাত্রার মধ্যে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাই যেন ছবির মূল সুর।
পরিচালক রায়ান কুগলার এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সংগ্রামের এক অন্যরকম চিত্র এঁকেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে তারা ভয়ের মধ্যে থেকেও ভালোবাসতে জানে, আর সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে। ছবিটির মাধ্যমে দর্শকদের মনে গভীর দাগ কাটে, যা তাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
‘সিনার্স’-এর গল্প আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতিচ্ছবি। ছবিটিতে একদিকে যেমন রয়েছে ভয়ের আবহ, তেমনই রয়েছে টিকে থাকার অদম্য মানসিকতা। এটি দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে, যা বর্তমান সময়েও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তথ্য সূত্র: The Guardian