ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়া কি তাদের অধিকৃত নয় এমন কিছু অঞ্চল ছাড়তে রাজি?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। রাশিয়া কি তাদের দখলে থাকা কিছু অংশ বাদে, অন্যান্য অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে রাজি হতে পারে? এমন একটি সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামির তত্ত্বাবধানে বুধবার (অনুমান করা হচ্ছে) ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে যেখানে তারা ইউক্রেনের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে রাজি হতে পারে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু ছাড় দিতে হবে, যার মধ্যে একটি হলো ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেওয়া।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজ থেকে এমন কোনো প্রস্তাব তাদের জানানো হয়নি এবং তার দেশ এমন কোনো প্রস্তাব সমর্থন করে না।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া যদি তাদের আঞ্চলিক দাবিগুলো শিথিল করে, তাহলে বিদ্যমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি হতে পারে। ইউক্রেনও এতে রাজি হতে পারে, যদি রাশিয়ার এই দখলকে স্থায়ী বা বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না হয়।
এই আলোচনার মাঝে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। কিয়েভও অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই বিষয়টি মেনে নিতে পারে।
তবে, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেটি এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নেতৃত্বে ৩০টি দেশের একটি জোট ‘coalition of the willing’ ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটি ‘reassurance force’ তৈরি করতে পারে, তবে সেই জোটে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, তিনি আসতে পারছেন না। তার পরিবর্তে হোয়াইট হাউজের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কেইথ কেলগ বৈঠকে যোগ দেবেন।
লন্ডনে এই বৈঠক এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে সন্দিহান। ইস্টার সানডেতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইউক্রেন জুড়ে হাজারোবার তা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং মাঠের বাস্তবতায় মিল নেই। তিনি আরও জানান, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগ (Defence Intelligence) যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সময়ে ফ্রন্টলাইনে কোনো যুদ্ধ বিরতির লক্ষণ দেখেনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইস্টার সময়ে রাশিয়া ফ্রন্টলাইনে বোমা হামলা চালিয়েছে, তবে তারা হামলার সংখ্যা কিছুটা কমিয়েছে এবং দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করেনি।
লন্ডনের বৈঠকে যুদ্ধবিরতি কেমন হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউজের মধ্যস্থতায় প্রায় তিন মাস ধরে আলোচনা চললেও, এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো ইউক্রেনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, তাই যুদ্ধ বন্ধ করতে তিনি রাজি নন। রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি পূর্বাঞ্চলীয় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চলের পুরোটা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
এর মধ্যে রয়েছে কিয়েভের কাছ থেকে খেরসন এবং জাপোরিঝিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো হস্তগত করা। তবে ইউক্রেন এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারবে না।
তবে একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি কিছুটা কমাতে রাজি হয়েছে। তারা ফ্রন্টলাইনে সংঘাত বন্ধ করতে রাজি হতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তবে জেলেনস্কি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মানতে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে প্রস্তুত। সম্ভবত ২০২২ সালের বসন্তের পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা হতে পারে।
এক্ষেত্রে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা না করার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, তারা লন্ডন বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার কাছে পৌঁছে দেবে। এছাড়া, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অনানুষ্ঠানিক দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে মস্কো সফরে যেতে পারেন।
উইটকফ এর আগে পুতিনের সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। ইউক্রেনের আশঙ্কা, উইটকফের রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি হয়তো রাশিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian