পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর নতুন পোপ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন কার্ডিনাল কেভিন ফারেলের হাতে।
আইরিশ-আমেরিকান এই ধর্মগুরু বর্তমানে ভ্যাটিকানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, যিনি ক্যামেরলেঙ্গো (Camerlengo) হিসেবে পরিচিত।
তাঁর মূল দায়িত্ব হলো পোপের মৃত্যুর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা এবং নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভ (Conclave) আয়োজন করা।
কেভিন ফারেলের জন্ম ১৯47 সালে, ডাবলিনে।
তাঁর বেড়ে ওঠা ছিল আয়ারল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণির একটি পরিবারে।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।
তাঁর মা চেয়েছিলেন, তাঁর চার ছেলের মধ্যে একজন অন্তত যাজক হন।
মায়ের সেই প্রার্থনা সফল হয়েছিল, কারণ কেভিন এবং তাঁর বড় ভাই ব্রায়ান দু’জনেই খ্রিস্টের সেবক হন।
ফারেলের ধর্মীয় জীবন শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে, যখন তিনি খ্রিস্টের যাজক সম্প্রদায়ে যোগ দেন।
এরপর তিনি স্পেনের সালামাঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইতালির পন্টিফিক্যাল গ্রেগরিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনা শেষে তিনি মেক্সিকোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাপলেইন হিসেবে কাজ করেন।
১৯৮৩ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন আর্চডায়োসিসে যোগ দেন।
সেখানে তিনি আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।
একই সময়ে তিনি নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ফারেলের কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হলো ডালাসের বিশপ হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন।
এরপর পোপ ফ্রান্সিস তাঁকে ২০১৬ সালে রোমে ডেকে পাঠান এবং কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন তাঁর আদর্শের অনুসারী।
ফারেলের বর্তমান পদ ‘ক্যামেরলেঙ্গো’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পোপের মৃত্যুর পর থেকে নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
এর মধ্যে রয়েছে পোপের মরদেহকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
এই সময়ে ফারেল পোপের ‘পাপাল রিং’ ধ্বংস করারও দায়িত্ব পালন করেন।
তবে কার্ডিনাল ফারেলের কিছু বিষয়ে বিতর্কও রয়েছে।
বিশেষ করে, তিনি সমকামিতা এবং গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করেন।
এমনকি, তিনি একসময় আয়ারল্যান্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মেরি ম্যাকআলিকে একটি ভ্যাটিকান সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে বাধা দিয়েছিলেন, কারণ তিনি সমকামীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছিলেন।
মে মাসের শুরুতে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই কনক্লেভে নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার গুরুদায়িত্ব এখন কার্ডিনাল ফারেলের উপর ন্যস্ত।
এই নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষ তাকিয়ে আছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই খবর গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান