জম্মু ও কাশ্মীর: সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকদের মৃত্যু, নিরাপত্তা জোরদার

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এরপর ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং হামলাকারীদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চলছে।

মঙ্গলবার (অনুমান করা হচ্ছে) এই হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আক্রান্তদের মধ্যে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যাই বেশি, ২৪ জন। এছাড়াও নিহতদের মধ্যে ১ জন নেপালী এবং ১ জন স্থানীয় গাইড ছিলেন।

এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ১৭ জনের বেশি। হামলার ঘটনার পর সেখানকার রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।

ঘটনার পর পরই নিরাপত্তা বাহিনী পুরো অঞ্চলজুড়ে টহলদারি শুরু করে। সেনা ও পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের ওপর তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুরাতন বিদ্রোহীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরে আসেন।

ঘটনার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে।

জম্মু ও কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। উভয় দেশই কাশ্মীরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে।

১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা লড়াই করছে। অনেক কাশ্মীরি, হয় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, না হয় স্বাধীন দেশ গড়তে চায়।

ভারত সরকার এই অঞ্চলের বিদ্রোহকে পাকিস্তান- মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বর্ণনা করে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে, বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control) অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশের চেষ্টাকালে বারামুল্লা জেলায় দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে তারা হত্যা করেছে।

তবে এই ঘটনার সত্যতা অন্য কোনো সূত্রে নিশ্চিত করা যায়নি।

পর্যটকদের ওপর হামলার পর সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বহু পর্যটক কাশ্মীর ত্যাগ করতে শুরু করেছেন। কলকাতার বাসিন্দা মনোজিত দেবনাথ নামের এক পর্যটক জানান, কাশ্মীর নিঃসন্দেহে সুন্দর, তবে এখন আর তাদের কাছে নিরাপদ মনে হচ্ছে না।

বুধবার, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।

পরে তিনি নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেন।

কাশ্মীর উপত্যকা, যা বিদ্রোহের কেন্দ্র, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা কিছুটা কমেছিল। তবে এখন আবার নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস