শিরোনাম: বিশ্বজুড়ে শিশুদের লালন-পালনের ধারণা: বাংলাদেশের জন্য কিছু পরামর্শ
আজকের দিনে, শিশুদের ভালোভাবে মানুষ করার ধারণাটি যেন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আধুনিক জীবনযাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে একাকীত্ব। সন্তানের ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তায় অনেক বাবা-মা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
তবে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে শিশুদের লালন-পালনের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। ম্যারিনা লোপেজ নামক এক লেখকের ‘প্লিজ ইয়েল অ্যাট মাই কিডস’ (Please Yell at My Kids) বইটিতে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি থেকে নেওয়া এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।
লোপোজ তার বইটিতে দেখিয়েছেন, কীভাবে বিভিন্ন দেশে বাবা-মায়েরা শিশুদের মানুষ করার ক্ষেত্রে অন্যদের সাহায্য নেন। সিঙ্গাপুরের কথা ধরুন।
সেখানে দাদা-দাদি, নানা-নানিরা শিশুদের দেখাশোনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা শিশুদের স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করেন, পড়াশোনায় সাহায্য করেন, এবং তাদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করেন। এর ফলে, বাবা-মায়েরাও কিছুটা স্বস্তি পান এবং নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা এই বিষয়টা দেখি, তাহলে দেখব এখানেও যৌথ পরিবারের ধারণা বেশ প্রচলিত। দাদা-দাদি, চাচা-চাচিরা শিশুদের লালন-পালনে সাহায্য করেন।
পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও শিশুদের প্রতি একটা আলাদা নজর থাকে। শিশুরা কারও না কারও স্নেহের ছায়ায় বড় হয়। এই সংস্কৃতি শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয় এবং তাদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
লোপোজ আরও উল্লেখ করেছেন, মোজাম্বিকের মায়েদের কথা। সেখানে ‘মা’ শব্দটি শুধু মা-বাবা-র জন্য সীমাবদ্ধ নয়।
পাড়ার মাসি, শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য সাহায্যকারী বয়স্ক প্রতিবেশী, এমনকি অতিরিক্ত খাবার সরবরাহকারী—সবার কাছেই এই সম্বোধনটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, শিশুদের দেখাশোনার ক্ষেত্রে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকে।
শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়াটাও জরুরি। নেদারল্যান্ডসের অভিভাবকদের মতো, শিশুদের বাইরে খেলতে পাঠানো যেতে পারে, যাতে তারা নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারে।
এর মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ে। অবশ্যই, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
এছাড়াও, লোপেজ তার বইতে দেখিয়েছেন, কীভাবে বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি ‘গ্রাম’ তৈরি করা যায়। ব্রাজিলের মায়েরা যেমন সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তাদের বন্ধুদের এবং পরিবারের সদস্যদের পাশে পান, তেমনি আমরাও পারি আমাদের বন্ধুদের এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিশুদের দেখাশোনার একটি দল তৈরি করতে।
এতে বাবা-মায়ের উপর চাপ কমে এবং শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে।
সবশেষে, শিশুদের লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কৃতির ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, প্রত্যেক দেশের সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ আলাদা।
তাই, আমাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো কী, সেই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান