বিশ্বজুড়ে মাতৃত্বের ধারণা, শিল্পকলার নতুন দৃষ্টি। মা, এই একটি শব্দ, যা যুগ যুগ ধরে স্নেহ, ত্যাগ আর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
মায়ের ভূমিকা সমাজ ও সংস্কৃতিতে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে এই ধারণাগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, বিশেষ করে শিল্পের মাধ্যমে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সম্প্রতি, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা মাতৃত্বকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছেন, যা চিরাচরিত ধারণার বাইরে গিয়ে ভিন্ন এক চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।
এই প্রসঙ্গে, ব্রিটিশ শিল্পী ক্যারোলিন ওয়াকারের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর ছবিতে মাতৃত্বের বাস্তব চিত্রগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
ওয়াকারের একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম হলো “বটলস অ্যান্ড পাম্পস”। এই ছবিতে স্তন্যপান করানোর সরঞ্জামগুলি একটি সাদা ট্রেতে রাখা হয়েছে।
শিল্পী তাঁর কাজে মাতৃত্বের সঙ্গে জড়িত দৈনন্দিন বিষয়গুলো তুলে ধরেন, যা অনেকের কাছেই পরিচিত। ওয়াকারের মতে, এই ছবিটি মূলত পুরুষদের বেশি আকর্ষণ করেছে, কারণ তারা শিশুদের বোতল খাওয়ানো বা নতুন শিশুর জন্মের পর সরঞ্জাম পরিষ্কার করার মতো অভিজ্ঞতার কথা মনে করতে পেরেছেন।
ওয়াকারের “লিসা” নামক চিত্রকর্মের সিরিজটিও মাতৃত্বের একটি অন্তরঙ্গ চিত্র। এই সিরিজে, তিনি তাঁর ভাবি-বউয়ের ছবি এঁকেছেন, যিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন।
এই চিত্রগুলি মা ও শিশুর জীবনের প্রথম মাসগুলোর গভীরতা তুলে ধরে।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের দ্য হেপওয়ার্থ ওয়েকফিল্ড গ্যালারিতে ওয়াকারের “মাদারিং” শীর্ষক একটি প্রদর্শনী চলছে।
এই প্রদর্শনীতে মায়ের প্রতিপালন, পরিবারের সমর্থন, ধাত্রী ও শিশুর দেখাশোনা করার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
এখানে শিল্পী মাতৃত্বকে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়েছেন, যেখানে শুধুমাত্র মা ও শিশুর সম্পর্কই নয়, বরং শিশুদের বেড়ে ওঠার পেছনে থাকা সকলের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
ঐতিহ্যগতভাবে, শিল্পকলায় মাতৃত্বের চিত্রণে পুরুষ শিল্পীদের আধিক্য দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, গুস্তাভ ক্লিমটের “দ্য থ্রি এজেস অফ উইমেন” অথবা কারাভ্যাজ্জিওর “ম্যাডোনা অ্যান্ড চাইল্ড উইথ সেন্ট অ্যানি”র কথা বলা যায়।
তবে, ক্যারোলিন ওয়াকারের মতো নারী শিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিকোণ থেকে মাতৃত্বকে চিত্রিত করছেন।
তাঁদের কাজে মাতৃত্বের সঙ্গে জড়িত চ্যালেঞ্জ, আনন্দ এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো নতুনভাবে উন্মোচন করা হচ্ছে।
আর্টের ইতিহাসে মেরি ক্যাসাত এবং বের্থে মরিসোর মতো impressionist শিল্পীদের কাজও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাঁরা তাঁদের ছবিতে মাতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। মরিসোর “দ্য ওয়েট নার্স অ্যাঙ্গেলে ফিডিং জুলি মানেট” -এর মতো চিত্রকর্মগুলো নারী ও শিশুদের প্রতিপালনের সঙ্গে জড়িত শ্রমের ধারণা দেয়।
ফটোগ্রাফিতেও মাতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যারি মে উইমসের “কিচেন টেবিল সিরিজ”, রিনেক ডাইকস্ট্রার “নিউ মাদার্স”, এবং ম্যাগি শ্যাননের “এক্সট্রিম পেইন, এক্সট্রিম জয়”-এর মতো কাজগুলো মাতৃত্বের বিভিন্ন দিক ক্যামেরাবন্দী করেছে।
এইসব কাজ মাতৃত্বের শারীরিক ও মানসিক অভিজ্ঞতার গভীরতা তুলে ধরে।
২০২৩ সালে, অ্যান্ডি গাল্ডি ভিঙ্কোর “সরি আই গেভ বার্থ আই ডিসঅ্যাপিয়ার্ড বাট নাও আই’ম ব্যাক” বইটি প্রকাশিত হয়, যা মাতৃত্বের প্রথম বছরগুলোর একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে।
বর্তমানে, শিল্পকলার জগতে নারী শিল্পীদের কাজগুলো আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্যারোলিন ওয়াকারের কাজ এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
তাঁর চিত্রকর্মগুলি “অ্যাক্টস অফ ক্রিয়েশন”, “গুড মম/ব্যাড মম”, এবং “মামা: ফ্রম মেরি টু মার্কেল”-এর মতো বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
মাতৃত্বকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার এই প্রবণতা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর মাধ্যমে, মাতৃত্বের সঙ্গে জড়িত নারীদের শ্রম, ত্যাগ এবং সমাজের প্রতি তাঁদের অবদানগুলো আরও বেশি স্বীকৃতি পাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন