যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের জেরে হাজারো মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি, মার্কিন সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (U.S. Customs and Border Protection – CBP) অভিবাসন প্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতিপত্র বাতিল করতে শুরু করেছে।
এর ফলে, অনেকে দেশত্যাগের নির্দেশ পেয়েছেন, এমনকি যাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
টেক্সাসের অস্টিনের একজন অভিবাসন আইনজীবী, হিউবার্ট মন্টয়া, যখন ইমেইলের মাধ্যমে জানতে পারেন যে তাকে দ্রুত দেশ ছাড়তে হবে, তখন তিনি হেসে উঠেছিলেন। কারণ, তিনি একজন মার্কিন নাগরিক।
এই ধরনের ঘটনাকে হাস্যকর বলেই মনে করছেন তিনি।
জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসনের একটি নীতির অবসান ঘটাতে গিয়ে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এই নীতি অনুযায়ী, কিছু অভিবাসন প্রত্যাশীকে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
মূলত, ‘সিবিপি ওয়ান’ (CBP One) নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে যারা সীমান্ত পার হয়ে এসেছিলেন, তাদের দুই বছরের জন্য পাওয়া অনুমতিপত্র বাতিল করা হচ্ছে। জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় নয় লক্ষাধিক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। টেক্সাসের একজন আইনজীবী টিমোথি জে ব্রেনার জানিয়েছেন, ১১ই এপ্রিল তাকেও দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি মনে করেন, সম্ভবত প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে অভিবাসন আইনজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের হয়রানি করার চেষ্টা করছে।
সিবিপি’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘সিবিপি ওয়ান’-এর অধীনে দেওয়া কিছু অস্থায়ী আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।
তবে, ঠিক কতজনকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের দাবি, অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভুল ব্যক্তির কাছেও এই ধরনের নোটিশ যেতে পারে, বিশেষ করে যদি কোনো সুবিধাভোগী তাদের পরিচিত মার্কিন নাগরিকদের যোগাযোগের তথ্য দিয়ে থাকেন।
সিবিপি জানিয়েছে, তারা এই বিষয়গুলো ব্যক্তিগতভাবে বিবেচনা করছে।
অনলাইন আলোচনাগুলোতে এই ঘটনার জেরে ভীতি ও উদ্বেগের চিত্র ফুটে উঠেছে। সমালোচকদের মতে, সম্ভবত এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করাই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য।
আইনজীবী ব্রেনার জানিয়েছেন, তার তিনজন মক্কেলকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যে এল সালভাদরে ফিরে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘জাস্টিস অ্যাকশন সেন্টার’-এর আইনজীবী হিলারি লি জানান, কতজন এই ধরনের নোটিশ পেয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আইনজীবীরা বিষয়টি জানতে পারছেন না। এমনকি, যারা এই নোটিশ পেয়েছেন, তারাও বুঝতে পারছেন না, তাদের কী করা উচিত।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ‘সিবিপি ওয়ান’ অ্যাপের মাধ্যমে নতুন করে প্রবেশের বিষয়টি স্থগিত করেছিলেন।
তবে, যারা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, তারা তাদের দুই বছরের অনুমতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু বাতিল সংক্রান্ত নোটিশ তাদের সেই আশা ভেঙে দিয়েছে।
নোটিশে লেখা ছিল, ‘আপনাকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে।’
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট’-এর শরণার্থী বিষয়ক পরিচালক রবীন বার্নার্ড বলেন, ‘বিষয়টি খুবই বিভ্রান্তিকর। যারা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেছেন, তাদের বন্ধুদের কেউ নোটিশ পেয়েছেন, আবার কেউ পাননি—এমন খবর শুনে তারা কতটা অসহায় বোধ করছেন, তা সহজেই অনুমেয়।’
আইনজীবীরা বলছেন, ‘সিবিপি ওয়ান’-এর সুবিধাভোগীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো তাদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করার সুযোগ পেতে পারেন। এছাড়া, যাদের অন্য কোনো অস্থায়ী সুরক্ষার কারণে দেশত্যাগের নির্দেশ স্থগিত করা হয়েছিল, তাদেরও এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আরেকটি সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত সম্প্রতি কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের দেশত্যাগের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
এই ব্যক্তিরা আর্থিক সহায়তাকারীর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে এবং নিজেদের খরচে যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছিলেন।
নিকারাগুয়ার ৪৮ বছর বয়সী মারিয়া জানান, ট্রাম্পের নির্বাচনের খবরে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু দেশ ছাড়ার নির্দেশ তার কাছে ‘বোমা ফেলার মতো’ লেগেছে।
তিনি জানান, নিজের জীবনধারণের জন্য তিনি এখনো গৃহকর্মীর কাজ চালিয়ে যাবেন এবং আশ্রয়ের জন্য আবেদন করবেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস