যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন নিয়ে লন্ডনে নির্ধারিত শান্তি আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। জানা গেছে, রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অনুপস্থিতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (তারিখ উল্লেখ করা যেতে পারে) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরিবর্তে এখন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। তবে ক্রেমলিন থেকে আসা প্রাথমিক বক্তব্যে জানা যায়, মস্কো এখনো ন্যাটো দেশগুলোর ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর বিরোধী।
অন্যদিকে, ইউক্রেন শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এতে অংশ নিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন। ইয়ারমাক বলেন, “সবকিছু সত্ত্বেও, আমরা শান্তির জন্য কাজ করব।
আলোচনার এই ডামাডোলের মধ্যে, বুধবার ইউক্রেনের মারহানেৎস শহরে রুশ ড্রোন হামলায় একটি বাসে থাকা নয়জন নিহত হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাতভর তাদের দেশের ওপর ১৩৪টি বড় আকারের ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্য এই আলোচনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। ব্রিটিশ মন্ত্রী ডেভিড ল্যামির এতে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মার্কো রুবিও’র পরিবর্তে ইউক্রেনের বিশেষ দূত আলোচনায় যোগ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলাদাভাবে হওয়া দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের ওপর থেকে তাদের দখলদারিত্বের দাবি ত্যাগ করতে রাজি আছে। তবে এর বিনিময়ে তারা চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ক্রিমিয়ার রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া।
যদিও রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে উভয় পক্ষই সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন সরকার ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, “আমরা ক্রিমিয়ার দখলদারিত্বকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দেব না।
আলোচনায় ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক সহায়তা বন্ধের মতো বিষয়গুলোও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রুশ মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে।
এদিকে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রস্তাব দিয়েছে যে যুদ্ধবিরতির পর ৩০টি দেশের সমন্বয়ে একটি “নিরাপত্তা বাহিনী” ইউক্রেনে মোতায়েন করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সংঘর্ষ না হয়। তবে রাশিয়া অতীতে এর বিরোধিতা করেছে।
ডেভিড ল্যামি আশা করেছিলেন, বুধবারের শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপকে একত্রিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু মার্কো রুবিও’র আকস্মিক অনুপস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি আলোচনার গুঞ্জন সেই চেষ্টা ব্যাহত করে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের যে অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই, সেগুলো ছেড়ে দিতে রাজি আছে। বিনিময়ে তারা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি চাইছে। অর্থাৎ, তারা চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেয় যে, সশস্ত্রভাবে সীমান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব।
তবে ইউক্রেন সরকার বলছে, তারা কোনোভাবেই ক্রিমিয়ার দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেবে না। কারণ, এটি ইউক্রেনের সংবিধানের পরিপন্থী।
অন্যদিকে, সম্প্রতি একটি ইস্টার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও, সীমান্তে কোনো যুদ্ধবিরতি লক্ষ্য করা যায়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান