অর্যগনের (Oregon) প্রাচীন পশুদের আচরণ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে জীবাশ্মীভূত পায়ের ছাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্যগন রাজ্যের জন ডে ফসিল বেড্স ন্যাশনাল মনুমেন্টে (John Day Fossil Beds National Monument) সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় কয়েক কোটি বছর আগের কিছু প্রাণীর পায়ের ছাপ। এই পায়ের ছাপগুলি সেই সময়ের পশুদের জীবনযাত্রা এবং আচরণ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে আমরা ইওসিন যুগে (Eocene Epoch) – যা প্রায় ৫ কোটি ৬০ লক্ষ থেকে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগের সময়কাল – সেখানকার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারব।
গবেষকরা বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছেন পাখির পায়ের ছাপের উপর। এই পায়ের ছাপগুলি থেকে বোঝা যায়, সেই সময়ের পাখিগুলি খাদ্যের সন্ধানে কীভাবে তাদের ঠোঁট ব্যবহার করত।
মাটির গভীরে থাকা পোকা বা অন্যান্য খাদ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তারা সম্ভবত ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ত। এছাড়াও, সেখানে পাওয়া গেছে ছোট আকারের সরীসৃপের পায়ের ছাপ।
এই সরীসৃপদের পায়ের ছাপগুলো থেকে তাদের চলাফেরা এবং জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর আমেরিকায় (North America) এই সময়ের সরীসৃপদের জীবাশ্ম খুবই কম পাওয়া যায়, তাই এই আবিষ্কারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণা দলের প্রধান কনার বেনেট (Conner Bennett) এবং তাঁর সহকর্মীরা এই জীবাশ্মগুলির ত্রিমাত্রিক (3D) মডেল তৈরি করেছেন।
এর ফলে পায়ের ছাপগুলির গঠন আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এই পায়ের ছাপগুলি বিশ্লেষণ করে আমরা সেই সময়ের পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারব।
এই গবেষণায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়েছে। গবেষকরা একটি তিন-আঙুল বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীর পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন, যা সম্ভবত গণ্ডার বা প্রাচীন যুগের টেপিরের (tapir) হতে পারে।
এছাড়াও, পাওয়া গেছে একটি তলোয়ার-দাঁতযুক্ত বিড়ালের পায়ের ছাপ। পায়ের ছাপ থেকে বোঝা যায়, বিড়ালটির নখর সম্ভবত লুকানো থাকত এবং তার হাঁটার ভঙ্গি আধুনিক বিড়ালের মতোই ছিল।
গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কারগুলি জীবাশ্মবিদ্যার গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তাঁরা আশা করছেন, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আরও অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে আনবে।
বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রেক্ষাপটেও, জীবাশ্মবিদ্যার গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাওয়া জীবাশ্মগুলি আমাদের দেশের প্রাচীন ইতিহাস এবং জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। প্রত্নতত্ত্ব এবং জীবাশ্মবিদ্যার গবেষণা আমাদের অতীতকে জানতে এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)