মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মাঝে তাদের ‘অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা’ (Temporary Protected Status – TPS) নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এই সুরক্ষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও আদালতের হস্তক্ষেপে তা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে, ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ এখনো অন্ধকারে, যা তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯০ সালে বিদেশি নাগরিকদের জন্য টিপিএস ব্যবস্থা চালু করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যেসব দেশের পরিস্থিতি বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়, সেখানকার নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে রক্ষা করা। এই সুরক্ষার আওতায় থাকা ভেনেজুয়েলার প্রায় তিন লক্ষ নাগরিক এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে বসবাসকারী আনা মারিয়া ফোরেস তামাকো, যিনি শরণার্থী সহায়তা নেটওয়ার্কের প্রধান, বলেন আশ্রয়প্রার্থীদের কষ্ট দেখে তার মন ব্যথিত হয়। তিনি এবং তার স্বামী গত বছর কলোরাডোতে যান, যেখানে অনেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক বসবাস করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝতে পারেন, সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আইনিভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়ার জন্য তারা দেশ ছেড়েছেন।
আন্দ্রেস পাচেকো, যিনি টেক্সাসে অভিবাসীদের জন্য একটি আইনি সহায়তা সংস্থা চালান, তিনি জানান, টিপিএস পাওয়া আগে তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল, তবে এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৮ মাস পর্যন্ত হতে পারে। ফলে, এই সময়ের পর তাদের কী হবে, তা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রায়ই ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করতেন। তিনি তাদের সন্ত্রাসী এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। যদিও আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের কারণে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, অনেকে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের মতে, টিপিএস-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তারা বিভিন্ন ব্যবসা ও শিল্পে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন।
টিপিএস-এর সুবিধাভোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদি তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তাদের সন্তানদের হয় যুক্তরাষ্ট্রে একাকী থাকতে হবে, অথবা তাদেরও ভেনেজুয়েলাতে ফিরে যেতে হবে।
ফ্লোরিডার কংগ্রেসওম্যান মারিয়া সালাজার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছিলেন, টিপিএস বাতিল করা হলে অভিবাসীদের শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এই সুরক্ষার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আইনজীবীরা টিপিএস-এর পক্ষে কথা বলছেন এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, টিপিএস-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা মানুষগুলো তাদের জীবন নতুন করে সাজানোর সুযোগ পেয়েছে এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখছে। এই সুরক্ষা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা