ঐতিহ্য হারাচ্ছে: আমস্টারডামের পুরনো একটি চায়ের দোকান বন্ধ হওয়ার উপক্রম, বাড়ছে উদ্বেগে।
আমস্টারডামের প্রাণকেন্দ্রের একটি পুরনো চায়ের দোকান, ‘ট জনচে’ (The Sun)। ১৬৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দোকানটি, যা নেদারল্যান্ডসের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে একটি, সেটি সম্ভবত শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাবে।
দোকানের মালিক মারি-লুইজ ভেল্ডার, যিনি গত ২৬ বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তিনি ক্রমবর্ধমান ভাড়ার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
দোকানটির বর্তমান ভাড়া মাসে প্রায় ৩,০০০ ইউরো, তবে ভেল্ডার জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িওয়ালা এই ভাড়া বাড়িয়ে ৪,৫০০ ইউরো করার দাবি জানিয়েছেন।
১৯৯৯ সালে তিনি যখন দোকানটি কিনেছিলেন, তখন মাসিক ভাড়া ছিল মাত্র ৯৭৫ গিল্ডার, যা বর্তমানের প্রায় ৪৪০ ইউরোর সমান ছিল।
ভেল্ডার জানান, এত বেশি ভাড়া দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, ক্রমবর্ধমান ভাড়ার কারণে ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিট পারোল’ এই দোকান বন্ধ হওয়ার খবর প্রকাশ করার পর থেকেই ভেল্ডার প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন।
সকলে তাঁদের দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং দোকানটি টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে, আমস্টারডামে পর্যটকদের জন্য তৈরি হওয়া বিভিন্ন চেইন শপ এবং দোকানের আধিক্য নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোর অভাবে শহরের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্থানগুলোতে ভাড়ার পরিমাণ বাড়ছে।
এর ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছেন না, সেখানে বড় কোম্পানিগুলো জায়গা করে নিচ্ছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ‘ট জনচে’ দোকানটি প্রথমে ভেষজ, কয়লা এবং জল বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে।
ডাচ সাম্রাজ্যের উন্নতির সাথে সাথে, এখানে চা ও কফির ব্যবসা শুরু হয়।
বর্তমান সময়ে, দোকানে আসা গ্রাহকদের জন্য ভেল্ডার আসাম চা পাতা ও বার্গামট দিয়ে বিশেষ ধরনের আর্ল গ্রে চা তৈরি করেন, যা প্রস্তুত করতে তাঁর প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছিল।
একসময় তাঁর দোকানে প্রায় ৩৫০ ধরনের চা পাওয়া যেত, কিন্তু এখন ভাড়ার কারণে ব্যবসার অবনতি হওয়ায় সেই সংখ্যাও অনেক কমে এসেছে।
আমস্টারডাম শহরের ৭৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু সহায়তা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তবে ভেল্ডারের জন্য সম্ভবত সেই সময়টুকু আর অবশিষ্ট নেই।
এই ঘটনার মাধ্যমে, একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, উন্নত দেশগুলোতেও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলো টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।
বাংলাদেশেও অনেক ছোট ব্যবসায়ী, বিশেষ করে যারা পুরনো ব্যবসা ধরে রেখেছেন, তাঁরাও এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পুরনো দোকানগুলোও, ক্রমবর্ধমান ভাড়ার কারণে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
এই পরিস্থিতি, বিশ্বায়নের যুগে ছোট ব্যবসার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জগুলোকেই তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান