বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রতি প্রাণীদের ভালোবাসার অসংখ্য নজির রয়েছে। কুকুর এমনই একটি প্রাণী, যারা তাদের মালিকদের জীবন রক্ষার জন্য প্রায়ই নিজেদের জীবন বাজি রাখে।
সম্প্রতি, বিভিন্ন ঘটনা থেকে জানা যায়, কীভাবে এই বিশ্বস্ত প্রাণীগুলো সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি বনের ঘটনা। ২০১৬ সালের আগস্টে, স্টিভ ক্রিকবাম নামের একজন ব্যক্তি জঙ্গলে কাঠের কচ্ছপ খুঁজছিলেন। তার সঙ্গী ছিল ‘লাভ ড্রাগন’ নামে পরিচিত, আদরের কুকুর হেনরি।
হঠাৎ, ক্রিকবাম দুটি ভাল্লুকের বাচ্চা দেখতে পান। তিনি হেনরিকে ডাকতে শুরু করেন, আর তখনই দেখেন একটি পূর্ণবয়স্ক ভাল্লুক তার দিকে তেড়ে আসছে।
ভাল্লুকটি ক্রিকবামকে আক্রমণ করে এবং তার ঊরুতে কামড় বসায়। জীবন হারানোর আশঙ্কায় যখন তিনি ছিলেন, ঠিক তখনই হেনরি ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল্লুকের উপর।
ভাল্লুকের সঙ্গে লড়াইয়ে হেনরি গুরুতর আহত হয়, কিন্তু ক্রিকবামকে বাঁচায়।
৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলায়ও কুকুরদের সাহসিকতা দেখা গেছে। মাইকেল হিংসন নামের একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে রোজেল নামের একটি কুকুর ৭৮ তলা থেকে নিরাপদে নামিয়ে আনে।
ওমর রিভেরা নামের আরেকজনের সারমেয় সঙ্গী সল্টি, তাকে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে আনে। এমনকি, মিলো নামের একটি কুকুর, তার দৃষ্টিহীন মালিক স্কট বেইলির জীবন বাঁচিয়ে দেয়, যখন সে রাস্তা পার হতে গিয়েছিলো।
কুকুরদের বীরত্বের গল্পগুলো কেবল প্রশিক্ষণ নির্ভর নয়। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ ছাড়াই অনেক কুকুর তাদের মালিকদের বিপদে সাহায্য করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, সু ক্যালভার নামের এক মহিলার একটি দুর্ঘটনা ঘটলে, তার কুকুর রকি তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য চেয়ে ছুটে যায় এবং তার স্বামীকে সেখানে নিয়ে আসে।
কুকুরদের এই ধরনের আত্মত্যাগের অসংখ্য গল্প রয়েছে। টবি নামের একটি কুকুর তার মালিককে শ্বাসরোধ থেকে বাঁচিয়েছিল।
আবার, ক্লোভার নামের একটি কুকুর তার মালিকের অসুস্থতার সময় দ্রুত সাহায্যের ব্যবস্থা করে। পোলো নামের আরেকটি কুকুর তার মালিকের শিশু সন্তানকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে।
ওয়েটরেটডগস (WeRateDogs) নামক একটি পডকাস্টের ম্যাট নেলসন জানান, তারা প্রায়ই কুকুরদের বীরত্বের গল্প শোনেন। তিনি বলেন, “আমি সব সময়ই বিস্মিত হই, কারণ তারা সত্যিই অসাধারণ কাজ করে।”
এই গল্পগুলো প্রমাণ করে, কুকুর শুধু গৃহপালিত প্রাণী নয়, তারা মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সাহসিকতা সত্যিই অনস্বীকার্য।
তারা মানুষের জীবনে যে গভীর প্রভাব ফেলে, তা সত্যিই অতুলনীয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian