অদ্ভুত পোশাকে ম্যারাথন দৌড়: এক ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা
প্রতি বছর, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যারাথন দৌড় অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। তবে এদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যারা শুধুমাত্র দৌড়নোর জন্য নয়, বরং এক বিশেষ কারণে এই প্রতিযোগিতায় নাম লেখান।
তাঁদের পোশাকের ভিন্নতা সহজেই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা এই দৌড়গুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সম্প্রতি, লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যারাথনেও এমন কিছু দৃশ্য দেখা গেছে, যা সত্যিই অসাধারণ।
রিচার্ড স্টোয়েট নামের এক ব্যক্তি, যিনি একজন নার্সের বিশাল আকারের পোশাক পরে দৌড়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, একটি দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। প্রায় ১০ ফুট লম্বা এই পোশাক পরে দৌড়ানো যে কতটা কষ্টের ছিল, তা সহজেই অনুমেয়।
স্টোয়েট জানান, দৌড়ের সময় তাঁর মনে হচ্ছিল যেন ১০ ফুটের একটি বিশাল বানর তাঁর পিঠে চেপে বসেছে! পাঁচ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট পর তিনি যখন ফিনিশিং লাইনে পৌঁছান, তখন তাঁর শরীরে ক্লান্তি ছিল স্পষ্ট।
শুধু স্টোয়েট নন, আরও অনেকে এই ধরনের পোশাকে ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন। কেউ ছিলেন বিশাল আকারের ভাল্লুক, কেউ আবার পরিচিত কোনো সিনেমার চরিত্র। কেউ এসেছিলেন রাইনো বা গন্ডারের পোশাক পরে।
এই ধরনের পোশাকের ভিতরে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে, যা দৌড়বিদদের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
ক্যাথি ডিন নামের এক নারী, যিনি ‘সেভ দ্য রাইনো ইন্টারন্যাশনাল’-এর হয়ে গন্ডারের পোশাক পরে দৌড়েছিলেন। তিনি জানান, পোশাকের ভেতরে নিজস্ব একটি মাইক্রোক্লাইমেট তৈরি হয়।
অতিরিক্ত গরম এবং ঘামের কারণে অনেক সময় চোখে জ্বালা হতে থাকে। এমনকি আগের দৌড়বিদদের ঘামের গন্ধও পাওয়া যায়।
তবে, এই ধরনের পোশাকে দৌড়ানোর মূল কারণ হলো দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। যারা এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজ করেন, তাঁদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সমাজের অসহায় মানুষদের সাহায্য করা।
এই দৌড়গুলি তাঁদের প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসাবেও কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সেভ দ্য রাইনো ইন্টারন্যাশনাল’-এর হয়ে দৌড়ানোর ফলে গন্ডার সংরক্ষণে সচেতনতা বেড়েছে, যা তাঁদের প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
আবার কেউ কেউ এই ধরনের পোশাকে দৌড়ান শুধুমাত্র একটি বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য। কেলি ক্লার্ক নামের এক মহিলা, যিনি একটি বিশাল ‘ম্যারাথন’ চকলেটের বার-এর পোশাক পরে দৌড়িয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন।
এই ধরনের প্রচেষ্টা একদিকে যেমন মানুষকে হাসায়, তেমনই অন্যদের অনুপ্রাণিত করে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই কাজ দেখে তাঁর সন্তানেরা খুব খুশি হয়।
তবে, এই ধরনের পোশাক পরে দৌড়ানো সব সময় সহজ হয় না। কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে।
জর্জ বিংহাম নামের একজন অ্যাঞ্জেল অফ দ্য নর্থ-এর বিশাল আকারের একটি মূর্তি সেজে দৌড়াতে গিয়ে বাতাসের কারণে প্রায় পড়ে গিয়েছিলেন। সৌভাগ্যবশত, দৌড়বিদদের তৎপরতায় তিনি রক্ষা পান।
সবশেষে, অদ্ভুত পোশাকে ম্যারাথন দৌড় নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এটি একদিকে যেমন শারীরিক কষ্টের, তেমনই মানসিক শান্তিরও প্রতীক।
অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ করেন, আবার সমাজের জন্য কিছু করার সুযোগ পান। এই দৌড়গুলি প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ সব কিছুই করতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian