শিরোনাম: সৌন্দর্যের মাপকাঠি: তরুণ প্রজন্মের উপর চাপ ও উদ্বেগের কারণ।
বর্তমান যুগে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তারের ফলে, তরুণ প্রজন্মের উপর সৌন্দর্যের এক কঠিন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই চাপ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে, যা বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ।
এই প্রতিবেদনে আমরা দেখব কীভাবে এই চাপ তৈরি হচ্ছে এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় কি।
ছেলে হোক বা মেয়ে, অল্প বয়স থেকেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যের আদর্শের সাথে পরিচিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টিকটক (TikTok) এবং ইনস্টাগ্রামের (Instagram) মতো প্ল্যাটফর্মে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা (influencers) তাদের জীবনযাত্রা এবং সৌন্দর্য চর্চা নিয়মিতভাবে তুলে ধরেন। এই ছবি ও ভিডিওগুলি তরুণদের মনে গেঁথে যায় এবং তারা নিজেদের সেই আদর্শের সাথে তুলনা করতে শুরু করে। এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের শরীরের গঠন, ত্বক বা চুলের ধরনের বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়।
বর্তমানে “সেফোরা টিনস” (Sephora Tweens) নামে পরিচিত একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে অল্পবয়সী মেয়েরা ত্বকের যত্নের জটিল রুটিন অনুসরণ করতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সুন্দর থাকতে হলে এই ধরনের ব্যয়বহুল পণ্য ব্যবহার করা অপরিহার্য।
এছাড়া, “প্রি-জুভেনেশন” (Prejuvenation)-এর মতো ধারণা বাড়ছে, যেখানে কুড়ি বছর বয়সি তরুণীরা তাদের ত্বকে বয়সের ছাপ আসার আগেই বিভিন্ন চিকিৎসা করাচ্ছে, যেমন – বোটক্স (Botox) ও ফিলারের (Filler) মতো পদ্ধতি গ্রহণ করছে।
ফ্যাশন জগৎও এই সৌন্দর্যের ধারণাকে প্রভাবিত করে। এখানে, পাতলা গড়নের এবং ফর্সা ত্বকের অধিকারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।
পোশাকের ক্ষেত্রেও, ব্র্যান্ডি মেলভিল (Brandy Melville)-এর মতো কিছু ফ্যাশন ব্র্যান্ড “এক সাইজের পোশাক” তৈরি করে, যা অনেক ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এর ফলে, যারা সেই আকারের সঙ্গে মানানসই নয়, তাদের মধ্যে আত্ম-অসন্তুষ্টি দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সবার প্রথমে, অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে এই বিষয়ে সঠিক ধারণা তৈরি করতে হবে।
তাদের বোঝাতে হবে যে, সৌন্দর্যের ধারণা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে এবং প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
তাদের জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট নির্বাচন করা এবং অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম (screen time) নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বিদ্যালয় এবং সামাজিক সংগঠনগুলিকেও এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা তরুণদের মধ্যে আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শরীরের ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে।
সমালোচনামূলক চিন্তা (critical thinking) বিকাশের মাধ্যমে, তারা উপলব্ধ তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করতে এবং তাদের উপর চাপানো হওয়া আদর্শগুলিকে প্রশ্ন করতে শিখবে।
চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত সৌন্দর্য সচেতনতা এবং শরীরের গঠন নিয়ে উদ্বেগের কারণে তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা বাড়ছে।
এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায়, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তারা তরুণদের এই ধরনের চাপ মোকাবেলা করার জন্য উপযুক্ত কৌশল শেখাতে পারেন।
সবশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে সৌন্দর্য একটি ব্যাপক ধারণা, যা শুধুমাত্র বাহ্যিক রূপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আত্মবিশ্বাস, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এবং মানবিক গুণাবলীও সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তরুণ প্রজন্মকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করে, আমরা তাদের সুস্থ ও সুখী জীবন গঠনে সাহায্য করতে পারি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান