বৈপ্লবিক প্রযুক্তি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে বিভাজন এবং উদ্বেগের সৃষ্টি
বর্তমান বিশ্বে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করছে। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর প্রভাব বাড়ছে।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বিতর্ক সামনে এসেছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পে, এআই-এর মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব দূর করতে এবং বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ধারণা (ডিইআই) প্রচারের চেষ্টা চলছিল। কিন্তু এখন সেই প্রচেষ্টাগুলোর ওপর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই বিষয়টিকে “উদ্বুদ্ধ এআই” হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাইছে। তাদের যুক্তি হলো, এআই উন্নয়নের নামে একটি বিশেষ আদর্শের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, এআই তৈরি করার সময় কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে থাকা পুরনো ধ্যান-ধারণা বা পক্ষপাত প্রতিফলিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো (সেলফ-ড্রাইভিং কার) কালো চামড়ার মানুষের থেকে শ্বেতাঙ্গদের ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে।
এছাড়াও, কিছু এআই ছবি তৈরি করার প্রোগ্রামে শল্য চিকিৎসকের ছবি তৈরি করতে বললে প্রায় সবসময়ই শ্বেতাঙ্গ পুরুষের ছবি আসে। এই ধরনের উদাহরণগুলো এআই-এর পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলে।
এই সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। উদাহরণস্বরূপ, গুগলের প্রকৌশলীরা তাদের এআই ইমেজ তৈরির পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছিলেন, যাতে ত্বকের বিভিন্ন রঙের মানুষের ছবি আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়।
কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, রাজনৈতিক চাপ এবং পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন কমে যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারাও এআই নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা জানতে চাইছেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করছে কিনা।
এই পরিস্থিতিতে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, “উদ্বুদ্ধ এআই”-এর ধারণা আসলে এআই-এর মধ্যে থাকা পক্ষপাতিত্বের সমস্যাকে স্বীকার করে এবং এর সমাধানে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।
তবে, এই বিতর্কের কারণে ভবিষ্যতে এআই উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, যেসব প্রকল্প সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য প্রযুক্তিকে আরও উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছে, সেগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এআই প্রযুক্তি আমাদের দেশেও দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
তাই, এআই-এর উন্নয়ন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি কিভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তা জানা জরুরি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, এআই প্রযুক্তি যেন সবার জন্য উপকারী হয় এবং কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি এটি যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হয়।
এর জন্য প্রয়োজন নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস