দক্ষিণ কোরিয়ার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়ার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেন দলটির সাবেক প্রধান লি জায়ে-মিং। আগামী ৩রা জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের দিকে এখন সবার দৃষ্টি।
সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত হওয়া প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।
নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পর লি জায়ে-মিং বলেন, “আমি শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নই, বরং যারা দেশে বিশৃঙ্খলা দূর করতে, সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং ঐক্য ও সুখের প্রত্যাশা করেন, তাদের সবার প্রতিনিধি।” প্রাথমিক নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন।
অর্থনৈতিক সমতা বৃদ্ধি এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে সোচ্চার লি জায়ে-মিং। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
গত বছর সামরিক আইন জারির চেষ্টার কারণে ইউনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।
৬০ বছর বয়সী লি জায়ে-মিং-এর রাজনৈতিক জীবন বেশ বর্ণাঢ্য। তিনি এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গিয়ংগির গভর্নর এবং সিওংনাম শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলছে। এর মধ্যে ঘুষ গ্রহণ এবং ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ভূমি উন্নয়ন কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে।
তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে সম্ভবত এই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যেতে পারে, কারণ প্রেসিডেন্টের কিছু আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউন সুক-ইওলের সামরিক আইন জারির ঘোষণার পর জনগণের আস্থা অর্জনে যখন ক্ষমতাসীন পিপলস পাওয়ার পার্টি হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে লি জায়ে-মিংয়ের এই উত্থান বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সামরিক আইনের বিরোধিতা করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত ওই আইন বাতিলের পক্ষে ভোট পেতে সহায়ক হয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, লি জায়ে-মিংয়ের এই মনোনয়ন এবং তার নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।
দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পখাতে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি একটি আদর্শ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই তার প্রধান লক্ষ্য।
বিরোধী দল পিপলস পাওয়ার পার্টি এখনো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি, যা আগামী ৩রা মে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
এর আগে, ২০২২ সালের নির্বাচনে ইউন সুক-ইওলের কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন লি জায়ে-মিং। এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা