বার্লিনে নাৎসি নির্যাতন শিবির, বেরজেন-বেলসেন-এর মুক্তি: ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শোকসভা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত ভয়াবহ নির্যাতন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বেরজেন-বেলসেন। সম্প্রতি, উত্তর জার্মানির এই শিবিরে ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে মুক্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন এই বিভীষিকাময় সময়ের সাক্ষী, তাঁদের পরিবার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার। এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন অনেকে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটেনের প্রধান রাব্বি এফ্রাইম মিরভিস।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হলকাস্ট (হলোকাস্ট)-এর শিকার হওয়া অনেকে তাঁদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন, ১৯৮৮ বছর বয়সী গ্রিক নাগরিক লোলা হাসিড অ্যাঞ্জেল।
তিনি এই শিবিরটিকে “একটা ভয়ঙ্কর স্থান” হিসেবে বর্ণনা করেন।
বেরজেন-বেলসেন-এ বন্দীদের উপর চালানো অত্যাচারের স্মৃতি আজও শিউরে তোলে। জানা যায়, এই শিবিরে প্রায় ২০,০০০ যুদ্ধবন্দী এবং প্রায় ৫২,০০০ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দীর মৃত্যু হয়েছিল।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ডায়েরি লেখিকা অ্যানা ফ্রাঙ্ক ও তাঁর বোন মার্গট।
১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ সেনারা যখন এই ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
সৈন্যদের একজন মেডিক্যাল অফিসার সেই সময়ের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, সেখানে টাইফাস, টাইফয়েড এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত কয়েক হাজার রোগী ছিল। মৃতদেহের স্তূপ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল, যা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক।
শোকসভায় এক বক্তা, যিনি অউশভিৎস থেকে বেরজেন-বেলসেন-এ এসেছিলেন, তাঁর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানান।
তিনি বলেন, “বেরজেন-বেলসেন-এ আসার পর আমি মৃত ও জীবিতদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করি। আমার ওজন এতটাই কমে গিয়েছিল যে, ব্রিটিশ সেনারা যখন আমাদের উদ্ধার করে, তখন আমার ওজন ছিল মাত্র ২৯ কেজি।”
বেরজেন-বেলসেন-এর ঘটনাগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক কালো অধ্যায়। এই শিবিরটি ছিল অত্যাচারের এক চরম দৃষ্টান্ত।
মুক্তি পাওয়ার পরেও এখানকার অনেক বন্দী অপুষ্টি ও অন্যান্য রোগের কারণে মারা যান।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান